![]() |
| পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউশন |
.
এমন কেউ ছিল যারা ক্লাশে এসেই শুরু করে দিত তার কল্পপ্রেমের অস্থির গল্প, আর টেবিলের উপর বসে অনেকেই মহা উৎসাহে সেসব শুনে, তাল যোগায় আর হাসে! ছিল ক্লাশে এসেই বন্ধুদের সাথে অস্থির আলিঙ্গন, কিংবা কোনো একদিন ক্লাশের কারো সাথে ঝগড়া শেষে একে অপরকে ছুটির পর দাঁড়াতে বলার হুমকি! ছিল মেয়ে বন্ধুগুলোর দিকে ননস্টপ কিছু ছেঁড়া কাগজের ছোঁড়াছুড়ি, যেখানে লেখা থাকত কিছু কথা, একেবারে অর্থহীন, আবেগ আর পাগলামিতে ভরা! ছিল ভীড়ের মধ্যে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে দুজনের কানে কানে কিছু কথা, যার কোনো অর্থই নেই! অথচ কতই না গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো তার কাছে, যে কথাগুলো শুনার অধিকার পায় নি!
.
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ক্লাশে ৮০ জন ছেলে থাকলে ৮০ টা গ্রুপ ছিল আমাদের! সবাই আবার আন্তঃসম্পর্কযুক্ত! সব গ্রুপ মিলে আবার একটাই গ্রুপ, একটাই পরিচয়- " আমরা জিএমসি'১৪ " ! কিছু মজার গ্রুপও ছিল! যেমন-পেনিক কমিটি (আতঙ্ক কমিটি), কোয়াইশ গ্রুপ! বাকিগুলোর নাম ভুলে গেছি! কেউ মনে করিয়ে দিলে খুশি হব। ক্লাশের সবচেয়ে দুস্টু ছেলেটার নাম 'সরওয়ার'। ডানপিটেরা হল এক নম্বরে ওয়াহিদ, তারপরে আসে সাদেল, রুবেল, আসাদ সহ অনেকে!
.
* * * * * *
এরপর লাইফে অনেক উত্থান-পতন, কত পরিবর্তন, অথচ সবকিছুর পরও একটা জিনিস এখনো টিকে আছে! স্কুল জীবনের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব! সেদিনের ফাজলামি, সিট ধরাধরি, মারামারি, গল্প, ফাঁকাফাকি করতে করতে গড়ে ওঠা সে সম্পর্ক! সে বন্ধুত্ব। ইন্টারনেটের যুগে হঠাৎ কাউকে খুঁজে পেলে 'হাই' টা বলার পরই শুরু হয় আবার ফাজলামি। সব ভুলে আবার সবাই ফিরে যাই সে সময়টাতে, যেন পুনঃজন্ম নিয়ে মানুষগুলাতে আবার ফিরে এসেছি! গ্রুপ তৈরি! সবাইকে এড! ফাজলামির এক পর্যায়ে গ্রুপ ত্যাগ! আবার ঠিক তখনই কেউ কেউ কর্তৃক আবার স্বয়ংক্রিয় এড হয়ে যাওয়া! এটাই বন্ধুত্ব! স্কুল লাইফের বন্ধুত্ব। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু পাল্টায়, শুধু পাল্টায় না স্কুল লাইফের বন্ধুত্ব! সেই নাম, যা দিয়েছিল সেদিন, বন্ধুরা জোর করে! আজীবন সে নামটা থেকে যায়!
.
স্কুলে লাস্ট বেন্ঞ্চে বসে সারাদিন দুষ্টামি করতে থাকা ছেলেদের বা মেয়েদের গ্রুপটা আজ আর নেই। একজন আরেকজনকে দেখেছিলাম প্রায় বছর পাঁচেক, কিংবা পুরো দশ! আজ সবচেয়ে গম্ভীর ছেলেটা ক্যাম্পাস কাঁপায়, কলেজ কিংবা ভর্সিটির! অথচ সবচেয়ে চটপটে মেয়েটা বিয়ের পর স্বামীর হাত ধরে চলে গেছে বাইরে! যে ছেলেটা টেবিলের উপর বসে সবাইকে তার প্রেমের গল্প শোনাত, সে আজ নির্জন নিরালায় বসে কবিতা লেখে, বেলা-অবেলায় বালিশ নোনতা করে, কিংবা নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়া টেনে কলিজা পোড়ায়, ফুসফুস পোড়ায়, আর স্মৃতির ভাবনায় ভেসে ভেসে স্বস্তি খুঁজে ফেরে! যে ছেলেটাকে বা মেয়েটাকে সবাই 'ব্যাটারি' বলে খেঁঁপাতো অল্প বয়সে চশমা নেয়ার জন্য, মানুষগুলোর সবাই আজ নিজ নিজ 'চশমা'টা ছাড়া পড়তে বসে না!
.
চারপাশের মানুষগুলো কেমন বদলে যাচ্ছে, বদলে যাবে! তবুও কিছু তো থেকে যায়। রোমান্টিক কোনো গান বা পরিচিত কোনো পারফিউম! কিংবা 'ওল্ড স্কুল'এর 'আজ রাতে কোনো রূপকথা নেই' অথবা 'সে যে বসে আছে একা একা' গানগুলো শুনলে বা হুট করে সে পরিচিত পারফিউমের কড়া গন্ধ পেলে মনে পড়ে যায় পরিচিত মানুষটাকে। মাঝখানে যেই আসুক..., নতুন তন্বী অথবা আটলান্টিক মহাসাগর। পুরনো মানুষগুলোকে মনে পড়ে মাঝেমাঝে, একটি দুটি বিকেল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়, অথবা জোৎস্নাভরা কোনো নিশি গভীর থেকে গভীর হয়। পুরনো রাগ-অভিমান, কোচিং শেষের ঝগড়াটা, ছোঁড়ে মারা কাগজের বোবা অনুভূতিগুলো, কিংবা সেই বাঘিনীকে মনে পড়ে! মনে পড়ে হাই স্কুলের সেই গাঢ় নীল বা খুব ছোটবেলার সাদা শার্টে কালো কলমের আঁকিবুকিঁ! কিছু মানুষতো হারিয়ে যায়, জীবন থেকে, কিন্তু সেই সাদা বা গাঢ় নীল ইউনিফর্মগুলো ঠিকই লুকিয়ে থাকে, পুরনো কাপড়ের ভাঁজে, কিংবা কোনো না কোনো ড্রয়ারে! পুরোনো বোবা সাদা-কালো আবেগগুলোও লুকিয়ে থাকে অস্থির চিত্তের মানব মনের ঝাপসা রিলে! সময়ে-অসময়ে ধরা দেয়, কিছু ভাবনা ফুরোয় না, আর কিছু বিকেল দীর্ঘ হয়, আর কিছু রাত গভীর হয়.....
.
আমিরুল ইসলাম
০৬-০৫-২০১৬

আগের মত আছি
উত্তরমুছুনoh...that's good......
উত্তরমুছুন