বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

অামাদের অবস্থান কোথায়

অামাদের অবস্থান কোথায়? সত্যি তো? সবার জানা দরকার। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বিশ্বের সেরা ২০০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে বাংলাদেশের কোন ইউনিভার্সিটির নাম নেই। মালোয়েশিয়ার আছে, ব্রাজিলের আছে,আর্জেন্টিনার আছে, কোরিয়ার আছে, তুরস্কের আছে, ভারতের আছে এমনকি রাজাকার রাষ্ট্র পাকিস্তানেরও একাধিক ইউনিভার্সিটি এই তালিকায় আছে।
আসুন এবার কারনগুলো দেখার চেষ্টা করি। এ ব্যাপারে আজকে একজন স্যারের লেখা পড়লাম। ফেসবুকে আমি উনার ফলোয়ার। তিনি লিখেছেন, নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাঈ আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই উত্তীর্ন হতে হবে, নোবেল কোটা কোন কাজে আসবে না। এখন আমাদের দেশের কথা চিন্তা করুন। উপজাতি কোটা, খেলোয়ার কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটা (বিশেষত জা.বি.তে -তাও ৫০-৫০!!!!!! ),বয়স ফ্যাক্ট (সব আদু ভাই-রা ভর্তির সুযোগ পান। আমি এমনও জানি, এক মেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও, শুধুমাত্র টিচারের মেয়ে এই যোগ্যতায় সে এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পেয়েছে....
আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ একবার বলেছিলেন, বিদেশের ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে গেলে মনে হয় এটা গোরস্তান, পিনপতন নীরবতায় সবাই যার যার পড়াশোনা করছে। আর আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটি কী রকম সেটা নাহয় না-ই বললাম।সবাই জানে।আমি দেশের প্রায় সব নামকরা ভার্সিটির হলে আর পাঠাগারে গেছি।কেউ গলাবাজি করতে আইসেন না। রাত এগারটার পর কেন হলের বাইরে থাকতে পারবে না, এর প্রতিবাদে আমাদের মেয়েরা মিছিল করে। জাহাঙ্গীরনগরে রাত এগারটা পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া বাইরে থাকা যায়।(!!!) তার পরে আসলে একটা নিয়ম রক্ষার সাইন করতে হয় হল গেটের খাতায়। (সম্ভবত রাত এগারটার পর তারা বাইরে গিয়ে গ্রুপ স্টাডি করতে চায়। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের এরকম অমানবিক সিদ্ধান্তের আমিও নিন্দা জানাই!! জাহাঙ্গীর নগরের আপুরূপী কু**গুলোর চালচলন আমাদের কালুরঘাটের টোকাই ছেলেগুলার থেকেও খারাপ। এরাই নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের র্যাগ দেয়। আমার যত ফ্রেন্ড জা.বি.তে পরীক্ষা দিতে গেছে প্রত্যেকেই র্যাগফোবিয়া নিয়ে পোস্ট দিয়ে গেছে। থাক সে কথা।
এবার আসি উচ্চশিক্ষায় গবেষণা প্রসংগে। বিদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোতে গবেষণা খাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়। আর আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলোতে এ খাতে কোন বরাদ্দ নেই। বলবেন, আমরা গরীব রাষ্ট্র? না জনাব। নব্বই কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সংগীত গাওয়া যায়, লাখ লাখ টাকা খরচ করে আলপনা (রোড পেইন্টিং) আঁকার মতো ফালতু কাজ করা যায়। সমাবর্তন নাম দিয়ে রুনা-লায়লাদের কোটি টাকা দিয়ে এনে গান করা যায়। একভাই পোস্ট দিয়েছিলেন,চবিতে রুনা লাইলাকে ১৪ লাখ দিয়ে আনা হয়। ১৪ টিও গান গায় নি।একটা গান শোনার দাম এক লক্ষ টাকারো বেশি।কোটি টাকা ব্যয়ে মমতাজদের এনে নাচানো যায়, কিন্তু উচ্চশিক্ষায় গবেষনা কাজে টাকা নেই। ইউনিভার্সিটিকে এগিয়ে নিতে হলে,দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইউনিভার্সিটির রিসার্চের বিকল্প নেই।
শিক্ষকদের অবস্থা দেখুন। ফাইভ পাশ করা কাউকে যদি প্রাইমারী স্কুলের টিচার বানানো হয় কিংবা এসএসসি পাশ করার পরদিনই যদি কাউকে হাইস্কুলের টিচার বানিয়ে দেওয়া হয়, অবস্থা কেমন হবে? বর্তমানে অনার্স শেষ করতেই অনেকে ইউনিভার্সিটির টিচার হয়ে পড়েন। না আছে কোন মৌলিক গবেষনাগ্রন্থ, বিশেষ প্রবন্ধ, না আছে প্রশিক্ষন! আর ব্যাক্তিত্বহীনতা তো আছেই। এরা স্টুডেন্টদের কী শিখাবেন? আর যারা অপেক্ষাকৃত ভালো তারা বিদেশ চলে যান। সিএনজি ড্রাইভারের মত বেতনে কে চাকরি করতে চায়?
বছরে কয়েকবার শিরোনামহীন, জেমস, আইয়ুব বাচ্চুকে এনে কনসার্ট করানো যায় (ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের অনুদান থাকে), কিন্তু বিদেশের বিখ্যাত কোন প্রফেসর/বিজ্ঞানী/ গবেষক এনে বক্তৃতা দেওয়ানো যায় না! স্টুডেন্টরা শিখবে কীভাবে? যেমন কর্তৃপক্ষ, তেমন স্টুডেন্ট!
সবচেয়ে বড় কথা হলো এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। শিক্ষামন্ত্রী কিংবা শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে চিন্তাই করেন না। দরিদ্র রাষ্ট্র হওয়ার পরও বুয়েন্স আয়ার্স কিংবা কায়েদে আজম ইউনিভার্সিটি পারলে আমরা পারবো না কেন?
এটা "ধর তক্তা, মার পেরেক" টাইপের কিছু না। প্রয়োজন ৫০/১০০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্লান। ভুলে গেলে চলবে না,একটা দেশের উন্নতি শুধু জাতীয় সংগীত গাওয়া, ক্রিকেট খেলা কিংবা সুন্দরবনকে ভোট দেওয়ার উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সে দেশের ইউনিভার্সিটির উপর।


Nov 23, 2016

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন