
আমি বিশেষ দিন পালনে অভ্যস্ত নই। বাবাকে নিয়ে সারা বছরই আমি অনেক লিখি। শেয়ার করি অনলাইনে। সবাই পড়ে, আমার বাবাও। তবে এই বিশেষ দিনেও সবার মতো, আমার আব্বারে আমি এতো লাভ ইউ-থ্যাঙ্ক ইউ-সরি দিতে পারব না। আমার বাবা বহুত খারাপ ভাই, বহুত খারাপ।
আমার আব্বা চোর ধরে। দুনিয়ার সবার কাছ থেকে লুকায়া আসি, হাহা-হিহি করে বাসায় ফিরি, আব্বা চোখের দিকে তাকায়। শক্ত করে ধইরা জিজ্ঞেস করে 'কি হইসে,মন খারাপ? সত্য বল। লুকাস ক্যান? তুই আমার সন্তান না আমি তোর?' ধরা খাই। বিরক্ত লাগে ভাই।
আমার আব্বা মোটেও ধৈর্যশীল,সহনশীল হ্যান ত্যান না। কিছু হইলেই বকা দেয়। বাবাকে দেখলেই আমার হাঁটু কাঁপে কখন কি জানি বলে বসে, "চুল এত বড় রাখছস ক্যান? কাল কই গেছিলি? এত রাত করে ফিরিস ক্যান?" হ্যান ত্যান ইত্যাদি ইত্যাদি।
আব্বা বুঝে না আমি বড় হইসি। বাড়ি ফিরতে একটু রাত হতেই পারে, এতো ফোন দেয়ার দরকার কি? কক্সবাজার যাব,বলে বেশি গভীর পানিতে নামবি না। বলেন, এইসব উপদেশ হাস্যকর না? কিন্তু যাওয়ার আগে পকেটে ছয় হাজার টাকা দিসে। আমি ভাব দেখায়া চাই নাই, তবুও।
আব্বা ব্যাকডেটেড। স্মার্টফোন চালায় না, বুঝেও না যে আমার ফোনে চার্জ তাড়াতাড়ি শেষ হয়। বন্ধ পেলেও ফোন দিতেই থাকে, দিতেই থাকে। অন করে দেখি ২১-২২ টা মিসকল। ব্যাক করলে দুনিয়ার গালি শোনায়। কেমনটা লাগে বলেন?
বাবা দিবসে আমার বাবার কিছু গল্প শোনাব। চাইলে পড়তে পারেন। ভালো লাগবে।
(১)
আমার বাবার মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছে। বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তার কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে একটা মোবাইল ব্যবহার আয়ত্ত করে এনেছেন। নতুনটায় পারবেন তো? তার চেয়ে বেশি চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। এই সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া নরমাল ফোন পাওয়া যাবে তো? অনেকদিন ওইসব ফোনের খোঁজখবর জানা নাই।
বাজারে ফোনের শোরুমগুলোতে ঢুকতেই সেলসম্যানরা আহলাদিত হয়, স্যার কোনটা দেখবেন? আমার চাওয়া শুনে হতাশ হয়ে বলে, ওদিকে দেখেন। পাশের সেলসম্যানকে ডেকে বলে, ওই স্যারেরে ওই ফোনগুলো দেখাও। যার কাছে পাঠায়, সেও বিরক্ত। চেহারা দেখে মনের কথা বোঝা যায়, এই যুগে এমন ক্ষ্যাত পোলাপান আছে? কোথাও আবার কেউ সহানুভূতিশীল, স্যার আর সামান্য কিছু টাকা হলেই কিন্তু আপনি একটা স্মার্টফোন নিতে পারতেন। আমি তার সহানুভূতিকে আরও উস্কে দেই। এমন একটা চেহারা করি, যার অর্থ দাঁড়ায়, নারে ভাই টাকা নাই।
অবশেষে একঝাঁক ক্ষেতের মাটি আর সহানূভূতি নিয়ে 'নোকিয়া' থেকে একটা নরমাল ফোন কিনে বাসায় ফিরি। তাদের আর বলা হয়না, টাকা কোনও বিষয় না ভাই। আমার বাবা প্রযুক্তির সাথে অতো বেশি পরিচিত না। বাসায় এসে মোবাইল চেঞ্জ করতে বাবা এসে পাশে দাঁড়ান। খুলে রাখা সিম হাতে নিয়ে বলেন, এইটা কী সিম বলে? আমি তো হাঁ হয়ে গেলাম!
বাবারা চাইলেই প্রযুক্তির সাথে মিলেয়ে চলতে পারেন তবে সব বাবারাই ইচ্ছে করে একটু সেকালে সেজে থাকেন, যেমনটা আমার বাবা। যদিও আমার বাবা অনেক স্মার্ট। সত্যি বলতে আমি আমার বাবার অযোগ্য পুত্র, বাবার তুলনায় আমার কোনো যোগ্যতাই নেই।
বাজারে ফোনের শোরুমগুলোতে ঢুকতেই সেলসম্যানরা আহলাদিত হয়, স্যার কোনটা দেখবেন? আমার চাওয়া শুনে হতাশ হয়ে বলে, ওদিকে দেখেন। পাশের সেলসম্যানকে ডেকে বলে, ওই স্যারেরে ওই ফোনগুলো দেখাও। যার কাছে পাঠায়, সেও বিরক্ত। চেহারা দেখে মনের কথা বোঝা যায়, এই যুগে এমন ক্ষ্যাত পোলাপান আছে? কোথাও আবার কেউ সহানুভূতিশীল, স্যার আর সামান্য কিছু টাকা হলেই কিন্তু আপনি একটা স্মার্টফোন নিতে পারতেন। আমি তার সহানুভূতিকে আরও উস্কে দেই। এমন একটা চেহারা করি, যার অর্থ দাঁড়ায়, নারে ভাই টাকা নাই।
অবশেষে একঝাঁক ক্ষেতের মাটি আর সহানূভূতি নিয়ে 'নোকিয়া' থেকে একটা নরমাল ফোন কিনে বাসায় ফিরি। তাদের আর বলা হয়না, টাকা কোনও বিষয় না ভাই। আমার বাবা প্রযুক্তির সাথে অতো বেশি পরিচিত না। বাসায় এসে মোবাইল চেঞ্জ করতে বাবা এসে পাশে দাঁড়ান। খুলে রাখা সিম হাতে নিয়ে বলেন, এইটা কী সিম বলে? আমি তো হাঁ হয়ে গেলাম!
বাবারা চাইলেই প্রযুক্তির সাথে মিলেয়ে চলতে পারেন তবে সব বাবারাই ইচ্ছে করে একটু সেকালে সেজে থাকেন, যেমনটা আমার বাবা। যদিও আমার বাবা অনেক স্মার্ট। সত্যি বলতে আমি আমার বাবার অযোগ্য পুত্র, বাবার তুলনায় আমার কোনো যোগ্যতাই নেই।
(২)
বাবা আর আমি বন্ধুর মত। রাজনীতি থেকে শুরু করে পরিণীতি সব আলোচনা আমি বাবার সাথে করতাম। আমি ক্লাশ টেন পর্যন্ত বাবার সাথে ঘুমাইছি, একা একা ভয় লাগত বলে।
বাবার হাত ধরে তার আড্ডা দেওয়ার জায়গাটায় যেতাম প্রায় সময়। আমার কোনও কাজ নাই সেখানে। উল্টো একটা চেয়ারের অপচয়। আমি গিয়ে দখল করে থাকি। আমার সবচেয়ে আনন্দের মুহুর্ত সেখানে চা পান পর্ব। বাবা ও তার সমবয়সীরা আড্ডা দিতে দিতে চা পান করে। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে থাকি। সবাই সবার কাপের চা শেষ করলে্ও আমার বাবা করেননা। শেষের কিছু অংশ রেখে দেন। আমার জন্য।
পৃথিবীর কত ছোট জায়গায় যে কত বড় আনন্দ লুকিয়ে থাকে, সেই চা তার ভয়াবহ উদাহরন। আমি ধীরে ধীরে সেই অল্প চা পান করি। চা শেষ বলে চোখের ঘোষণার পরও আমি কাপ এপাশ ওপাশ বাঁকা করে চা বের করার চেষ্টা করি। সামান্য পাওয়া গেলে সেকি আনন্দ! কোন এক আড্ডায় আমার জন্য পুরো এককাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বাবা আমার বেড়ে ওঠাকে স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন। তারপর থেকে আমি আর ছোট হতে পারিনি। আর ইদানিং আমার সামনে মায়ের রেখে যাওয়া ফ্লাস্ক ভর্তি চা আমাকে সার্বোভৌম করে দিয়েছে।
চা আসক্ত হয়ে যা বুঝলাম, একজীবনে মা বাবার চায়ের ঋন শোধ করাই কঠিন। জগতের বিলাসবহুল ডিনারসেটে আমি আসলে ভাঙা কাপ হয়ে জন্মেছিলাম।
আমিরুল ইসলাম আল মামুন
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জ্ঞিনিয়ারিং
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন