গতরাত থেকে লিখতে চেষ্টা করছি। কিছুই লিখতে পারলাম না। আমি লেখক হিসেবে জঘন্য তা আমি ভালই জানি। ইদানিং তা মন থেকে একদম মেনে নিয়েছি হয়তো, কারণ লেখালেখি ছেড়ে দেব এজন্য লিখতে ইচ্ছা করেনা তা না, আসলেই মন থেকে লিখতে ইচ্ছা করেনা। মনে হয়, লাভ কি ! তবে মা দিবসের জন্য একটা লেখা লিখবো বলে তুলে রেখেছিলাম। যখনই কথা গুলো মাথায় ঘুরত চোখে পানি চলে আসতো।
একটা প্রশ্ন অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুরছে। বাবা মা কে নিয়ে কোন কনফেশন পেজ নেই কেন ? প্রেমিকা কে কথা সামনা সামনি না বলা গেলেও অন্তত কোন বন্ধুকে তো বলা যায়, কিংবা কোন প্রিয়জনকে। সবচেয়ে বেশি না বলা কথা থাকে বাবা মা এর জন্য, সেগুলো তাদেরকেও বলা যায়না, অন্য কাউকেও বলা যায়না। কথা গুলো মনে মধ্যে কেমন ভারী হয়ে থাকে। একটা কনফেশন পেজ করা যায়না ? একটু হালকা হতে চাই!
আম্মাকে বলা দরকার, আমি মোটরসাইকেলে উঠলে ব্যালেন্স করতে পারিনা সত্যি কিন্তু এমন ও না যে এই বয়সে এসে এখনো টাল সামলাতে পারব না। মাকে ছাড়া এই বিরান নগরীতে কিভাবে নিশ্বাস নিতে হয় তা আমাকে কেউ শিখিয়ে পরিয়ে দেয় নি, তবুও পারছি তো। অথচ লোকে বলে আমি নাকি কাগজের বাঘ।
প্রচন্ড আঙ্গুল ব্যাথা করছে। ইদানিং টাইপ করতে করতে সবগুলো আঙ্গুল ভেঙ্গে এক হয়ে গেছে মনে হয়। তবে 'মা দিবসে কিছু গল্প না বললেই নয়'।
আমাদের বাসায় প্রায় দুপুরে কেউ একজন এসে দরজা ধাক্কাতো। আমি আর আমার বোন দৌড়ে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে, দরজা না খুলে যে যার বিছানায় শুয়ে পড়তাম।
পাশের বাড়ি থেকে এসেছে। বিচার নিয়ে।
পাশের বাড়ি থেকে এসেছে। বিচার নিয়ে।
নাকে মুখে কাঁথা দিয়ে ঢেকে ঘুমানোর অভিনয় চলতো। যতক্ষণ না মা এসে কাঁথা সরিয়ে দিতো। প্রচন্ড ধমকে জানতে চাইতো, আবার কার টিনে বল মেরেছিস?
আমি কাঁথার ভেতরে চোখ মুখ ঘষাঘষি করে একটা ঘুমের ভাব নিয়ে অনেকক্ষণ পর কাথার নিচ থেকে বের হতাম। চোখে মুখে বিরক্তের ভাব আনার চেষ্টা করতাম। ভাবটা এমন, কাঁচাঘুম ভাঙিয়ে দিল।
গলাটাও একটু চেপে ঘুম জড়ানো কন্ঠ বানানোর চেষ্টা করতাম, কী হয়েছে?
আমি কাঁথার ভেতরে চোখ মুখ ঘষাঘষি করে একটা ঘুমের ভাব নিয়ে অনেকক্ষণ পর কাথার নিচ থেকে বের হতাম। চোখে মুখে বিরক্তের ভাব আনার চেষ্টা করতাম। ভাবটা এমন, কাঁচাঘুম ভাঙিয়ে দিল।
গলাটাও একটু চেপে ঘুম জড়ানো কন্ঠ বানানোর চেষ্টা করতাম, কী হয়েছে?
মায়ের কাছে গোপন একটা চশমা থাকে। দুনিয়ার সব দেখতে পারে সে। আমার ঘুম ঘুম ভাবের আড়ালে যে গল্প, কন্ঠে ঘুম জড়ানোর যে চেষ্টা, সব তার কাছে পরিস্কার। তাই আমাকে ঘুম থেকে তোলায় বিন্দুমাত্র অনুতাপ না দেখিয়ে নির্মমভাবে জানতে চাইলো, কেন আবার মানুষের চালায় বল মেরেছিস? আমি রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে উল্টো জানতে চাই, কই? কখন?
মা আরও রেগে যেতেন, ইসমাইলের আম্মা বিচার দিয়ে গেলো যে।
আমি বললাম, বল! কতক্ষণ ধরে ঘুমাইছি। তুমি না দেখে গেলা ঘুমাইছি।
মা আরও রেগে যেতেন, ইসমাইলের আম্মা বিচার দিয়ে গেলো যে।
আমি বললাম, বল! কতক্ষণ ধরে ঘুমাইছি। তুমি না দেখে গেলা ঘুমাইছি।
মা এবার স্কেল, লাঠি বা অন্যকিছু খুঁজতে যায় অন্য ঘরে।
মায়ের যেমন একটা চশমা থাকে, তেমন একটা চশমা থাকে সন্তানদেরও। তারাও ওই চশমায় মাকে দেখতে পায়। মায়ের মুখ দেখে ভেতর পড়তে পারে।
আমিও পারতাম, জানতাম কিছুই আনবেননা। ভয় দেখানোর জন্য এই খোঁজাখুঁজি।
মায়ের যেমন একটা চশমা থাকে, তেমন একটা চশমা থাকে সন্তানদেরও। তারাও ওই চশমায় মাকে দেখতে পায়। মায়ের মুখ দেখে ভেতর পড়তে পারে।
আমিও পারতাম, জানতাম কিছুই আনবেননা। ভয় দেখানোর জন্য এই খোঁজাখুঁজি।
মা, এবার বোনকে ধরে নিয়ে আসতেন। কী করছিলো। বিচার আসলো কেনো?
বোনেরা সবসময় বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেয়ার মমতা নিয়ে জন্মায়, আর ছোট বিপদে ফাঁসিয়ে দেয়।
সে দ্রুত বিচারে আইনে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে যেতো। সত্যবাদী সাক্ষীর মতো গড়গড় করে বলে দিতো, নতুন টেনিস বল কিনেছে। সেটা দিয়ে খেলছিলো।
বোনেরা সবসময় বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেয়ার মমতা নিয়ে জন্মায়, আর ছোট বিপদে ফাঁসিয়ে দেয়।
সে দ্রুত বিচারে আইনে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে যেতো। সত্যবাদী সাক্ষীর মতো গড়গড় করে বলে দিতো, নতুন টেনিস বল কিনেছে। সেটা দিয়ে খেলছিলো।
মা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি মায়ের দিকে।
আমার চেহারায় থেকে এখন ঘুমের ভাব আড়াল করার চেষ্টা করছি। ঘুমের ভাব আনা সহজ। রক্ষা করাও সহজ। কিন্তু সরানো সহজ না।
মা কয়েক লাখবারের মতো সেই হুমকী দেন, আরেকবার যদি করিস। বুঝিস। কিন্তু কিছু করবেন না, তা আমি ভালো মতনই জানি।
এই আমার মা।
আমার চেহারায় থেকে এখন ঘুমের ভাব আড়াল করার চেষ্টা করছি। ঘুমের ভাব আনা সহজ। রক্ষা করাও সহজ। কিন্তু সরানো সহজ না।
মা কয়েক লাখবারের মতো সেই হুমকী দেন, আরেকবার যদি করিস। বুঝিস। কিন্তু কিছু করবেন না, তা আমি ভালো মতনই জানি।
এই আমার মা।
আমার আশপাশের সবার তখন খেলনা ছিলো।
আমার ছিলো না। আমার আশপাশের সবার মায়ের কাছেই তখন টাকা ছিলো, আমার মায়ের ছিলোনা।
তাদের অনেক ছোট ছোট গাড়ি ছিলো। আমার ছিলো না। তবুও এক সন্ধ্যায় আমার মা, মামাকে দিয়ে আমার জন্য একটা আর্মীর ট্যাংক কিনে আনালেন। তাদের গাড়ীগুলোর সামনে অনায়াসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যেতে পারে যে গাড়ি।
আমার ছিলো না। আমার আশপাশের সবার মায়ের কাছেই তখন টাকা ছিলো, আমার মায়ের ছিলোনা।
তাদের অনেক ছোট ছোট গাড়ি ছিলো। আমার ছিলো না। তবুও এক সন্ধ্যায় আমার মা, মামাকে দিয়ে আমার জন্য একটা আর্মীর ট্যাংক কিনে আনালেন। তাদের গাড়ীগুলোর সামনে অনায়াসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যেতে পারে যে গাড়ি।
আমি যাবো কক্সবাজার বীচে। বন্ধুরাও যাচ্ছে। নিজের টাকা পয়সা বলতে যা বোঝায় এসময় থাকার বয়স না। মা বাবা কারোরই আমাকে ছাড়ার ইচ্ছে ছিল না। সরাসরি না হলেও 'কী দরকার যাওয়ার' টাইপ কথা বলছে দুজন। ধীরে ধীরে সময় যখন ঘনিয়ে এলো। মা তার ব্যাগ, বিছানার চাদরের নীচ, ড্রয়ারের কাপড়ের ভেতর থেকে বের করে দুই হাজার টাকা হাতে তুলে দিলেন।
পৌঁছে ফোন দিবি।
পৌঁছে ফোন দিবি।
এখন যেমন কারো কাছে মোবাইল না থাকলে মানুষ অবাক হয়, তখন কারো কাছে মোবাইল দেখলে অবাক হতো। আমি মাকে জানালাম, আমার একটা মোবাইল লাগবে। ইন্টারনেট ছাড়া কিছু শিখা যায় না। টাকার চেয়ে বড় বাধা তখন সমাজ, আত্মীয়স্বজন। সবারই এক কথা, অল্প বয়সে ছেলের হাতে মোবাইল দিয়ে নষ্ট কইরেননা। আমার মা ছয় হাজার টাকা হাতে দিয়ে বলল, মোবাইল হবেনা এই দামে?
এই হল মা। সমস্ত প্রশ্রয়-আশ্রয়ের জায়গা। তবু আমরা নষ্ট হয়ে যাই নি। কি জানি নিবরাস, সাকিফ, সাদমানদের ব্যাপারটা কেমন ছিল!
এই হল মা। সমস্ত প্রশ্রয়-আশ্রয়ের জায়গা। তবু আমরা নষ্ট হয়ে যাই নি। কি জানি নিবরাস, সাকিফ, সাদমানদের ব্যাপারটা কেমন ছিল!
মায়েরা মহিয়সী হয়েই জন্মায়।
দুনিয়া জানেনা, এটা কেবলই সংবাদ সংস্থাগুলোর অক্ষমতা...
দুনিয়া জানেনা, এটা কেবলই সংবাদ সংস্থাগুলোর অক্ষমতা...
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন