বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

বেদনার ষোল'কলা

বেদনার ষোল'কলা  
ন্ধুরা যখন বুয়েটে পরীক্ষা দিচ্ছিলো আমি তখন শ্যামলী বাসে করে ঢাকা থেকে ফিরছিলাম! আর কাদঁছিলাম! মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়ে ঠিক পানি নয়,যেন রক্ত ঝরছে! জীবনে অনেকবার কেদেঁছি,কখনো চোখ দিয়ে পানি বের হতো না! সেদিন কেন জানি চোখদুটো ঝর্ণা হয়ে ওঠেছিল!

কৈশোর থেকে যদিও বড় হয়ে কি করবো এ ব্যাপারে একটা জিনিসই ভেবেছিলাম, মেডিকেলে পড়বো! ব্যাপারটা আমার কাছে এমন লাগতো, আমার নামের পাশে মেডিকেল ছাড়া আমি আর কিছু ভাবতে পারিনা! আমার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি ভাল ছাত্র  আর ভাল ছাত্ররা মেডিকেলে পড়ে!

কলেজে উঠে লক্ষ্যটা এসে ঠেকলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায়! শহরে ইন্জ্ঞিনিয়ার ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। মেডিকেলে কথা পাড়লেই সবাই এমনভাবে তাকায় যেন মেয়ে দেখছে! বলে মেডিকেল প্রফেশন মেয়েদের! ছাগলের মত মুখস্ত পড়ালেখা সব! জাতীয় মেধারা সব বুয়েটেই পড়ে! সামাজিক স্রোত নাকি ছোটবেলা থেকেই যে এক বদভ্যাস, যত পরিত্যাক্ত যন্ত্রপাতি অথবা যন্ত্রাংশ আছে সব জড় করে পুরনো বাক্সগুলোতে জমিয়ে নিজস্ব ব্যাক্তিগত ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ বানানো, কারণ ঠিক এ দুটার কোনটা তা বলতে পারছি না! ছোটবেলা থেকে প্রচুর জিনিস নষ্ট করে আসছি! এখন অবশ্য দায়িত্বটা আমার ভাই নিষ্টার সাথে নিজের হাতে তুলে নিয়েছে! জীবনে কত মার খাইছি মায়ের হাতে..! তবে, ইঞ্জিনিয়ার আমার হতেই হবে।

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে এ প্লাস পায়, কারণে অকারণে পায়! সেই সামাজিক নিয়ম মেনেই হোক আর মেধার জোরেই হোক, এ প্লাস ঠিকই পেলাম, কিন্তু উঠলোনা বুয়েটের পয়েন্ট! তাতে ক্ষতি নেই, বরং শাপে বর হলো, আমার পরম আরাধ্য ঢাবির ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদই হয়ে দাঁড়ালো একমাত্র লক্ষ্য! অবশ্য ঢাবিতে পড়ার ইচ্ছার চেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সাধটা বেশি ছিল! ইচ্ছা থাকলেই সব হয় নন। আমারও হয় নি!

তবু আমি মনস্থির করে ফেলেছি ততদিনে, সামাজিক যন্ত্রই হবো! ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, হবু শ্বশুর না হলে মেয়ে দেবে কেন? বাবা মা কে জানালাম, আহসানউল্লাহয় ইলেকট্রিকালে পড়তে চাই! তারা আমাকে আশ্বাস দিল, আগে ব্রাকে একটা পরীক্ষা দে। দিলাম। সরকারি ভার্সিটি কপালে ছিল না! বাট ছেলে তো খারাপ ছিলাম না! কমপিউটার সায়েন্স কিংবা ইলেকট্রিক্যাল যে কোনোটাই পড়তে পারবো! ভার্সিটি কি মনে ছিল না। সাবজেক্টটার লোভ ফেলতে পারলাম না! বহু আরাধ্য সাবজেক্ট! মন স্থির করে ফেললাম সিএসসি নিয়ে পড়ে ফেলব। হ্যাঁ,ব্রাক ইউনিভার্সিটিতেই!

আমি জানি আমি বেসরকারিতে পড়ি এটা কেউ আমার কাছ থেকে আশা করে না। আর এমন তো না যে আমি সরকারিতে কোথাও টিকি নাই! কিন্তু আমার একটা স্বপ্ন আছে! আর সেটা ঢাবি বা বুয়েটে পড়া ছিল না! আমার স্বপ্নটা বেড়ে উঠেছে ইন্জ্ঞিনিয়ারিং-কে ঘিরে! আর এজন্য ইন্জ্ঞিনিয়ারিং অনুষদ ছাড়া অন্য কোনো অনুষদে পরীক্ষাও দিই নাই! সেটা ঢাবি হোক, জাবি হোক আর চবি হোক! অনেকেই হয়তো জানে না,(শুধু আমার মা জানে) মেডিকেলে যাতে আমি না টিকি তার জন্য মসজিদে পন্ঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলাম। একথা জানার পর মা কেদেঁছিল পর্যন্ত! আর সে জলের জন্য হয়তো.....

কিন্তু আমার মনে হয়েছিল মেডিকেলে টিকলে বাবা-মা জোর করে আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করাই দিবে! প্যারাময় জীবন,শেষ হয়ে যাব! আমার এটা মনে হয়েছিল,কারণ বাবা শত ব্যাস্ততার মাঝেও মেডিকেল পরীক্ষার আগের রাতে চিটাগাং শহরে এসে গিয়েছিলেন। এসে মোবাইলটা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলেন উত্তেজনায়! অথচ আমার সেন্টার পড়েছিল মাত্র দু'মিনিটের পথ চট্টগ্রাম কলেজে। এর পরে ঢাকা আসলাম চারবার,সিলেট গেলাম। বাবা একবারও সাথে ছিলেন না! আমি বুঝতে পারি বাবা-মার কত আশা ছিল ছেলে মেডিকেলে পড়বে...

অথচ কারো আশা পূরণ হয় নি! না আমার,না বাবা-মার। না সময়ের,না স্রোতের! এভাবেই গেল আমার বছরটা। কেবল অপ্রাপ্তি দিয়েই!

তবে একটা জিনিস আমি অস্বীকার করতে পারি না। সেটা হলো- জীবনের শ্রেষ্ট শিক্ষাগুলো আমি এই বছরই পেয়েছি! ব্যর্থতার থেকে,সমাজ থেকে,পরিবেশ থেকে,বাস্তবতা থেকে, সর্বোপরি নিজের থেকে....


শুভ বিদায় ২০১৬
ডায়েরি'১৬

৩১.১২.২০১৬

1 টি মন্তব্য: