![]() |
স্যার আইজাক নিউটন |
বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
নাম- স্যার আইজাক নিউটন।
জন্ম- ৪ জানুয়ারী, ১৬৪৩ এবং মৃত্যু- ৩১ মার্চ, ১৭২৭।
বাসস্থান- ইংল্যান্ড, জাতীয়তা-ইংরেজ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
বেদনাপূর্ণ প্রাথমিক জীবন:
নিউটন জন্মের কয়েক মাস আগেই পিতার মৃত্যু হয়। জন্মের সময়ে আইজাক ছিলেন দুর্বল শীর্ণকায় আর ক্ষুদ্র আকৃতির, দাই তাঁর জীবনের আশা সম্পূর্ণ ত্যাগ করেছিলেন। হয়তো বিশ্বের প্রয়োজনেই বিশ্ববিধাতা তাঁর প্রাণরক্ষা করেছিলেন। বিধবা মায়ের সাথেই নিউটনের জীবনের প্রথম তিন বছর কেটে যায়। এই সময় তার মা বারনাবাস নামে ভদ্রলোকের প্রেমে পড়ে তাকে বিবাহ করেন। নব বিবাহিত দম্পতির জীবন শিশু নেহাতই অবাঞ্ছিত বিবেচনা করে মা শিশু নিউটনকে তার দাদির কাছে রেখে দেন।১২ বছর বয়সে নিউটনকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হলো। জন্ম থেকেই রুগ্ন ছিলেন নিউটন। তবু তার দুষ্টুমি কিছু কম ছিল না। কিন্তু শিক্ষকরা তার অসাধারণ মেধার জন্য সকলেই তাকে ভালোবাসতেন।
স্কুলের অধ্যক্ষ প্রায়ই স্কুলে পৌঁছাতে দেরি করত। একদিন নিউটন বললেন, স্যার, আমি আপনার জন্য একটা ঘড়ি তৈরি করে দিচ্ছি, তাহলে ঘড়ি দেখে ঠিক সময়েই স্কুলে আসতে পারবেন। নিউটন ঘড়ি তৈরি করলেন। ঘড়ির উপরে থাকত একটা পানির পাত্র। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি সেই পাত্রে ঢেলে দেয়া হতো। তার থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঘড়ির কাঁটার ওপর পড়ত এবং ঘড়ির কাঁটা আপন গতিতেই এগিয়ে চলত।
ভাগ্যের পরিহাসে নিউটনের সৎ বাবা মারা গেলেন। মার একার পক্ষে জমিজমা দেখাশোনা করা সম্ভব হলো না। স্কুল ছাড়িয়ে চৌদ্দ বছরের নিউটনকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলেন তার মা।
ভাগ্যক্রমে চাচা উইলিয়াম ভাইপোর জ্ঞানতৃষ্ণায় মুগ্ধ হয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলেন। চাচা কেমব্রিজের ট্রিনাটি কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিই ভাইপোকে আবার স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। এক বছর পর নিউটন ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হলেন। শুরু হলো এক নতুন জীবন।
ছাত্র হিসেবে নিউটন ছিলেন যেমন অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী তেমনি অসাধারণ মেধাসম্পন্ন। তার সবচেয়ে বেশি দখল ছিল অঙ্কে। যে কোনো জটিল অঙ্কের সমাধান সহজেই করে ফেলতেন। তবুও অঙ্কের প্রতি তার কোনো আকর্ষণ ছিল না। প্রকৃতির রহস্য তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। নিউটন বিশ্বাস করতেন একমাত্র বিজ্ঞানের মাধ্যমেই প্রকৃতির এই গোপন রহস্যকে উদ্ঘাটন করা সম্ভব।
বিজ্ঞানী নিউটন:
মূলত নিউটনের আগ্রহ ছিল গণিত ও বলবিজ্ঞানের উপর। ট্রিনিটি কলেজে তিনি কেপলারের আলোকবিজ্ঞান বিষয়ক সূত্রের উপর অধ্যায়ন করেন। এরপর তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রতি পড়াশুনায় অধিক মনোযোগ দেন। স্নাতক শিক্ষা গ্রহণকালে নিউটনের কিছু নিবন্ধের অনুসন্ধান পাওয়া যায়। ১৬৬৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভের সময়ে নিউটন তার বিখ্যাত দ্বিপদী উপপাদ্য বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করেন। ঠিক একই সময়ে ফ্লাকসিয়নের পদ্ধতি আবিষ্কার বিষয়ক প্রথম তত্ত্ব প্রদান করেন। লিংকনশায়ারে নিউটন গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এখানে এসে রসায়ন এবং আলোকবিজ্ঞান বিষয়ের উপর বিভিন্ন পরীক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। একই সাথে চালিয়ে যেতে থাকেন তাঁর গণিত বিষয়ক অধ্যায়ন। ১৯৬৬ সালে নিউটন তাঁর মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কারের সূচনা করেছিলেন।
১৬৪৭ সালে Philosophiac Naturalis Pricipia Mathmatica প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের প্রথম খণ্ডে নিউটন গতিসূত্র সন্বন্ধে আলোচনা করেছেন।
![]() |
ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা |
i) প্রত্যেকটি বস্তু চিরকাল সরলরেখা অবলম্বন করে সমবেগে চলতে থাকে।
ii) বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।
iii) প্রত্যেকটি ক্রিয়ার সমান বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
দ্বিতীয় খণ্ডে, নিউটন গ্যাস ও ফ্লুইড বস্তুর গতির কথা আলোচনা করেছেন। গ্যাসকে কতকগুলো স্থিতিস্থাপক অণুর সমষ্টি ধরে নিয়ে তিনি বয়েলের সূত্র প্রমাণ করেন। গ্যাসের উপর চাপের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পরোক্ষভাবে শব্দ তরঙ্গের গতিবেগও নির্ধারণ করেন।
তৃতীয় খণ্ডে, মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব সন্বন্ধে খুঁটিনাটি বিষদভাবে আলোচনা করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবেই সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো ঘুরছে। তেমনি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘুরছে।
১৬৭১ সালে তিনি লন্ডনের রয়াল সোসাইটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৬৭২ সালে তাঁর প্রথম বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ‘আলোক বিজ্ঞান’ প্রকাশিত হয়। ১৬৮৪-১৬৮৬ সালে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘প্রিন্সপিয়া’। ১৬৮৯ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৬৯৬ সালে তিনি সরকারি টাকশালের ওয়ার্ডেন এবং পরে প্রধান পদ লাভ করেন। ১৭০৩ সালে নিউটন পেলেন এক অভূতপূর্ব সম্মান। তিনি রয়াল সোসাইটির সভাপতি। আমৃত্যু তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১৭২৭ সাল, নিউটন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। চিকিৎসাতে কোনো সুফল পাওয়া গেল না। অবশেষে ২০ মার্চ মহাবিজ্ঞানী নিউটন তার প্রিয় অনন্ত বিশ্বপ্রকৃতির বুকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলেন। সাত দিন পর তাকে ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবিতে সমাধিস্থ করা হলো।
সমস্ত দেশ অবনত মস্তকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই জ্ঞানতাপসকে। যদিও নিজেকে তিনি কখনো পণ্ডিত বা জ্ঞানী ভাবেননি। মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তিনি লিখেছিলেন,
"পৃথিবীর মানুষ আমাকে কী ভাবে জানি না কিন্তু নিজের সম্বন্ধে আমি মনে করি আমি একটা ছোট ছেলের মতো সাগরের তীরে খেলা করছি আর খুঁজে ফিরেছি সাধারণের চেয়ে সামান্য আলাদা পাথরের নুড়ি বা ঝিনুকের খোলা। সামনে আমার পড়ে রয়েছে অনাবিষ্কৃত বিশাল জ্ঞানের সাগর।"
স্যার আইজাক নিউটনের আরও কিছু বিখ্যাত উক্তি:
১) মহাকর্ষ সবসময় আমাদের এটি ব্যাখা করতে পারে যে গ্রহগুলো কিভাবে ঘুরছে। কিন্তু এটি ব্যাখা করতে পারে না যে কে গ্রহগুলোকে এই অবস্থায় রেখেছেন
২) সত্য সবসময় সহজবোধ্যতার মাঝে পাওয়া যায়। এটি কখনো জটিলতার মাঝে পাওয়া যাবে না।
৩) মানুষ অনেক বেশি দেয়াল তৈরি করেছে কিন্তু পরস্পরের জন্য খুব বেশি সেতু তৈরি করতে পারে নি।
সম্পাদনায়: আমিরুল ইসলাম আল মামুন
তথ্য ও ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট
|
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন