শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

ত্যানার দেনা

কে কার সাথে প্রেম করতেসে, কতদিন ধরে করতেসে, কতবার কি করছে, সবকিছু নিয়ে পোস্ট করা যাবে, কে বাথরুমে কয়বার যায়, কে বাথরুমকে ওয়াশরুম বলে আর কে টয়লেট বলে, কার মন খারাপ, কেন খারাপ, কে কোন দলের সাপোর্ট করে না করে, কেন করে, কোন দলের কখন খেলা, কে কত গোল দিল, কেন গোল দিল, কেন দিতে পারল না, কি হলে দিতে পারতো, কারো জন্মদিন তাই তার সাথে ছবি দেয়া যাবে, কার কোন গান ভালো লাগে না লাগে, বৃষ্টি হইতেসে নাকি হইতেসে না, কে প্যান্ট ঠিকমত পরে কে পরেনা, কার ওড়না গলায় থাকে, কার বুকে.....
.
এইসব কিছু নিয়ে ফেসবুকে যখন যা ইচ্ছা পোস্ট করা যাবে, মত প্রকাশ করা যাবে। শুধু বিশ্বের কোথাও কোনো ভীষণ ন্যায় বা ভীষণ অন্যায় হলে তা নিয়ে পোস্ট করা যাবেনা, মত বা অনুভূতি প্রকাশ করা যাবেনা। সমবেদনাও জানানো যাবেনা! তাহলেই যুক্তিখন্ডন, তাহলে যৌক্তিকতা এবং লাভ ক্ষতি বিশ্লেষণ। কেউ জিজ্ঞেস করবে না মন খারাপ হইলে সেলফি তুলে পোস্ট দিয়ে লাভ কি, বা মৃত মানুষের প্রোফাইলে 'ভাই তুই কেন চলে গেলি' ওয়াল পোস্ট দিয়ে লাভ কি! কিন্তু কোথাও কোনো ন্যায় বা অন্যায়ের প্রতিবাদ বা সমর্থনে প্রো-পিক পরিবর্তন করলে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লাগবে যেন!
.
এর মধ্যে এক দল আসবে "আমার যখন শক্ত ..... হইসিল তখন তো হ্যাশট্যাগ দেয়া হয়নাই, ছবি চেঞ্জ করা হয়নাই, এখন অমুক ঘটনায় এত সিম্প্যাথি ক্যান? " এই টাইপ প্রশ্ন তুলে মাথা আউলা করে ফেলবে! ভাই আপনার সিম্প্যাথি না থাকলে দেখায়েন না, আপনার তো আমার প্রেমিকার উপরও দরদ নাই, এখন আপনার নাই বলে কি আমার থাকতে পারেনা?
.
আমি কি করছি, কেন করছি আমার ব্যাপার। আমি কি করব, কেন করব আমি বুঝলে চলবে, এতে আপনার মাথা ব্যাথা হলে আমার কি করার আছে? দেশে ডাক্তারের অভাব পড়েছে নাকি! আমি লুচো না কচু তাতে আপনার সমস্যা কেন? আপনার উড়নায় টান পড়ে নি তো কোনোদিন। সরি! আপনার গার্লফ্রেন্ডকে চোখ টিপ দিছি কোনোদিন? বলতে পারবেন? আপনি কেন চোখ রাঙ্গাবেন? আমি আপনার মত না তো! আমি তো শরীরের আবৃত অংশসমূহ আর ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিষ্ট ছাড়া কিছুই গোপন করি না। আপনি ক্যাফে নাইনটি নাইনে কার হাত ধরে উপরতলায় উঠেছিলেন ফেসবুকে বলতে পারবেন? কিংবা ফোনে আপনার পাড়ার প্রেমিকাটিকে?
.
রেপ খুন ছিনতাই এসব নিয়ে আমি আপনি যতটা চিন্তিত, তার থেকে বেশি চিন্তিত হই সিগারেটের দাম বাড়লে। সিলেটে-কুমিল্লায় জঙ্গী হামলা নিয়ে আমি আপনি যতটা না উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়েছি মেসির অসদাচরণের দায়ে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার খবরে.... ভালো মানুষ একটু কম সাজলেই ভালো, ফেসবুক যদিও নীতি আদর্শ আর নৈতিকতায় ভরা, তবুও তো সমাজের এই অবস্থা!
.
যার যার অনুভূতি তাকে প্রকাশ করতে দিন। ত্যানা কম পেঁচান, নিজে শান্তিতে থাকেন, অন্যকে থাকতে দেন......

সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭

আমিরুলের গার্লফ্রেন্ড

 "আমিরুলের গার্লফ্রেন্ডের না থেকে যায় না!" ক্লাশের সবচেয়ে কম কথা বলা মেয়েটিও নানা ছুতোয় কথাটা তোলে জানতে চাইবে আসলে কেউ আছে কি না। "সত্যি বলছি, নেই।" "না, আমি বিশ্বাস করি না। প্রেমে পড়ার মত সবকিছু তোমার আছে। তুমি মিথ্যা বলছ।" "সত্যি, কসম বলছি।" "তাহলে হয়ে যাবে। ওয়েট।" "যদি আমার ইচ্ছে না থাকে তো! তখন কিভাবে হবে?" "কি বলো? তুমি বিয়ে করবে না?" এতক্ষণে মানুষটার মুখ হাঁ হয়ে যায়। "হ্যাঁ, করবই তো। করব না কেন?" এই হল সুন্দরী সামিয়ার সাথে কথা-বার্তা।

ভাসির্টি থেকে ফেরার পথে- "আচ্ছা সুহৃদ, লাইফে প্রেম করাটা কি খুব জরুরি?" "না তো! সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা এমনিতে তো বেশ আছি। তাহলে কেন শুধুশুধু প্রেমবোঝা বইতে হবে।" "কিন্তু ওরা যে বলে...!" "যারা প্রয়োজন মনে করে তারা করুক। সবার তো কফিতে রুচি না ও থাকতে পারে।" "হ্যাঁ, তুই ই ঠিক।"

"আচ্ছা, তুমি প্রেম কর না কেন তাহলে?" কি সর্বনেশে কোয়েশ্চেন!

উত্তর দিচ্ছি, ধৈর্য্য ধরতে পারলে শুনুন। সত্যি বলতে কি, প্রেম জিনিসটাকেই আমার ভয় লাগে। এটা সত্যি প্রেম নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি লিখালিখি করি। হিজিবিজি যাই হোক, অনেকে পড়ে তো! এসবের বেশিরভাগ প্রেম সম্পর্কিত। প্রেমের অভিজ্ঞতাই যদি আমার না থাকে তাহলে এসব আসে কোথা থেকে। সহপাঠি আনিকার মতে, কিছু অভিজ্ঞতা তো লাগেই। আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম। তবে লিখালিখিটা আসে মন থেকে। রবীন্দ্রনাথ, শরৎ, বঙ্কিমবাবু এতগুলো প্রেম করে নি। তাদের বেলায় তো প্রশ্নটা ওঠে না।

একটু আগে যেটা বলছিলাম-প্রেমে আমার ভয় কাজ করে। সেটা কি রকম? দাঁড়ান বলছি- ধরেই নিলাম, আমি কাউকে জান-প্রাণ দিয়ে ভালবাসি। কি হবে আমার, যদি কখনো সর্ম্পকটা ভুলে যায়? কিংবা সে যদি কখনো ঘুম থেকে উঠে আমাদের সর্ম্পকটা অস্বীকার করে বসে? অথবা আমারই যদি তাকে আর ভাল না লাগে তারই বা কি হবে তখন? মোটর-সাইকেলে তেল ফুরিয়ে গেলে হাতে টেনে নেয়া যায়। ভালবাসায় রিজার্ভ বলে কিছু নেই। সবটুকুন নগদ।
ধরে নিলাম, নীতিগত ভাবে আমি সৎ তবু কখনো যদি এমন হয় যে, এক সময় হঠাৎ মানুষটাকে আর ভাল লাগছে না! তার হাত ধরে আনন্দ পাচ্ছি না। একসাথে রিক্সায় ঘুরে ভাল লাগছে না। কথা বলতে ইচ্ছে করে না ; মনে হয় সব বলা হয়ে গেছে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে না; তাকিয়ে থাকার আর কিছু নেই। তার চেহারা আমার মুখস্ত। ইম্প্রেস করতে ইচ্ছে করে না ; সে এমনিতেই দিন রাত আমাকে নিয়ে আছে। ইম্প্রেস করার কিছু নেই। কেমন হবে তখন? কিংবা বিপরীত দিক থেকেই যদি এমন হয়? কোথায়, কার কাছে যাব আমি?
 ইচ্ছে করে না, কোন অপরাধে না, কোন কারণ ছাড়াই মানুষটার প্রতি আবেগ ভোতা হয়ে গেছে। একদিন ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম অন্য কাউকে আমার ভাল লাগছে। কী করব তখন? 'ভাল লাগার' ব্যাপারটি তো আর প্লেনিং করে করি নি! কাউকে আর ভাল না লাগলে আমার কী করার আছে? অন্য কাউকে ভাল লাগলে আমার দোষ কেন হবে? আমার আর যাই হোক, তারই বা কি হবে? সে সেটা মানতে পারবে কখনো? আদর করে বাবু ডাকের বদলে যখন গালি আর অবহেলা সে মেনে নিবে কোন জাদুবলে? হতাশা আর দুঃখ তাকে কুরেকুরে খাবে না? কিংবা আত্মহত্যাও যে করে বসবে না তারই বা নিশ্চয়তা কি? তখন কোনদিকে যাব আমি? কিংবা আমাকে যে ভালবাসছে সে তো অভিনয়ও করতে পারে। হতে পারে সে শুধু টাইম পাসটাকেই উদ্দেশ্যে রেখেছে। সবাই-ই যে ভালোবেসে ‘ভালোবাসি’ বলে, তা নয়। সেই ‘ভালোবাসি’টা যে কেউ কেউ ভালোবেসে গ্রহণ করে! সবাই ভালোবেসেই চুমুটা খায় না, স্রেফ চুমু খেতে ভাল লাগে বলেই খায়। তবে কেন এমন কাউকেই চুমুটা খেতে হবে যে ভালোবেসেই চুমুটা গ্রহণ করছে? চুমু খাওয়াটা সুখের, মানছি। তবে কেন সেই সুখ পেতেই হবে যে সুখ অন্যকারোর অসুখ বাধিয়ে দেয়? কোন ভালোবাসায় ভালোবাসা নেই, সেটা কেউ জানবে কী করে?
অনেকের মনে হয়তো একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। কেউ বলে, কেউ বলে না। সেটা হল- সত্যিই যদি আমি প্রেমে না থাকি তাহলে অতশত লিখি কেমনে? তাদের জন্য আমার উল্টো প্রশ্ন থাকল- "যে লোকটা বক্সিং লড়ে সে কি বউকে আদর করে না?" কেউ না করলে সেটা ভিন্ন কথা। সবচেয়ে বড় কথা হল, ভালবাসা থাকে মনে। বাইরেরটা তো কমিটমেন্ট। এ কথা বললে অনেকে আবার আমাকে থামিয়ে দেয়। ব্যাপার না।
  সিঙ্গেল মানুষগুলো কি আসলে খুব একটা একা অনুভব করে? না, তাদের সাথে সব সময় কেউ একজন থাকে। খুব সুন্দর কোন দৃশ্য দেখার পর তারা ভাবে; যেদিন মানুষটার সাথে পরিচয় হবে সেদিন তাকেও নিয়ে আসবে। সিলেটের চা বাগানের চির সবুজের মাঝে এমনি এক দিনে তাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে কেমন অনুভূতিই না হবে! আকাশে কোন বিমান উড়ে গেলে তার কথা মনে পড়ে। কবির সুমনের 'বাশুঁরিয়া' গানটা শোনার সময় তাকে চোখের সামনে দেখা যায়। এক এক লাইনে তাকে এক এক জামায় দেখা যায়। আচ্ছা কাল্পনিক ভালবাসা বলে কী কিছু আছে ? সম্পর্কে যারা জড়ায় তারা না হয় একজন কাউকে নিজের মত করে পায়...যারা জড়ায় না... তাদের কী আসলেই কেউ থাকে না?
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় "ইরোটোমেনিয়া",কারো সাথে সম্পর্ক নেই...সপ্তাহে দু দিন দেখা করার ব্যাপার নেই... কোনদিন কাউকে ফোন করে বলা হয় না স্বপ্ন ভাঙ্গার কোন গল্প...তবু কেন মধ্যরাতে কলকাতার অঞ্জন-মান্না আর আমাদের তাহসান এসে চোখ ভিজিয়ে দেয় ? রুমের বন্ধুদের তাদের গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে আসার পর করা গল্প,আর অলস বিকেল বেলায় কিংবা নির্জন রাত্রিবেলা তাদের মোবাইলে বলা কথাগুলো আপনার বুকটাকে কাপাঁয় কেন? ট্রেনের জানালায় হেডফোন লাগালে আপনার ভেতরে এরকম আলোড়ন সৃষ্টি হয় কেন ? কেউ আপনার সাথে নেই তবু খুব সুন্দর কোন মুভি দেখার পর আপনার গা ছমছম করে উঠে! কেউ আপনার সাথে নেই, শুধু সমুদ্রের ছাতার নিচে কফি খেলে আপনার ভেতরে তোলপাড় হয়...একেবারে অপরিচিত নির্জন নিরিবিলি স্বর্গছেড়া চা বাগানে হালকা বাতাসে যখন নতুন কুড়িঁগুলো অদ্ভুদভাবে দোল খায়,আহ্ কি মধুর সংঘর্ষ,যেন স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে আর বুকের ভেতরটা অদ্ভুদভাবে মোচঁড়ে উঠে,কেমন শূণ্য শূণ্য লাগে চারপাশ। সবাই আছে,কিন্তু কি যেন নেই,কে যেন নেই!
এমন কেন হয় !! জুনাইদ ঈভানের মতে, সিঙ্গেল লাইফের মানুষ গুলো আসলে সিঙ্গেল থাকে না। আসলেই তাই। এরা থাকে 'ডিমেন্সিয়া প্রিকক্স' নামে এক কাল্পনিক জগতে। কখনো দেখা হয় নি ; তবু দেখা হয়েছে লক্ষ লক্ষ রাতে। মাঝে মাঝে একটা মানুষকে নিয়ে আপনি ভাবেন। এই পৃথিবীটা খুব নিষ্ঠুর মনে হলে মানুষটার সাথে কথা বলা হয়। কি কথা হয় মানুষটা জানে না। কথাগুলোও জানে না মানুষটা কে!
সবশেষে যে প্রশ্নটা থেকেই যায় তা হল- "সত্যিই কি তুই কাউকে ভালবাসিস না? আর সব মানলাম।তবুও মানুষ ই তো তুই, নাকি?" আচ্ছা বলছি এটাও। একটু অপেক্ষা করুন। আগে একটা ঘটনা বলে নিই। এক বান্ধবীকে আমি 'জানু' বলে ডাকি। সে আজ প্রশ্ন করল- "সত্যি করে বলতো তুই আরো কতজনকে 'জানু' বলে সম্ভোধন করিস?" আমি তাকে বললাম- "কাউকে না। সবারই দেখি একজন না একজন আছে যাকে 'জানু ' বলে ডাকে। খুব ইর্ষা ইর্ষা লাগে। আমি ভাবি আমার এমন একজন তো আছে যাকে বললে সে রাগ করবে না, বা তাকে বলা যায়। আর সে মেয়েটি তুই।" "আচ্ছা তোর আমার কি দেখে ভাল লাগছে সেটা বল?" "তোকে দেখি ই তো না অনেকদিন। তবে প্রথম ভাললাগা বলে কথা..." যাক, সেদিকে আর না যাওয়াই ভাল। মেয়েটির নাম সেগুপ্তা। আমার মতই চশমিস। আমার আগেই চশমা নিয়েছিল। আমরা তখন ছেলে-মেয়ে মারামারি করতাম দুষ্টামি করে। জাস্ট ভাল লাগত, আনন্দ পেতাম বলে এটা করতাম। সবাই অবুঝ-নিষ্পাপ। কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না এতে, অনুভবও করতাম। সদ্য সমাপ্ত প্রাইমারি লেভেলের রেশটা তখনো যায় নি তো! ক্লাশ সিক্সের সময়ের কথা। একদিন তাকে এমনই এক মুহুর্তে তাকে আমি মেরেছিলাম। ভুলে মারটা বেশি পড়ে গিয়েছিল। সে খুব কেঁদেছিল। তার হয়তো এটা মনে নেই। কিন্তু আমার মনে আছে। খুব মনে আছে। এই ঘটনার পর তার প্রতি সহানুভুতি জাগ্রত হল। নিজেকে খুব অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছিল। সে এর পর রাগ করে অনেকদিন কথা বলে নি আমার সাথে। কি জানি হয়তো এর থেকেই তার অস্ত্বিত্বটা আরো বেশি করে অনুভব করতে লাগলাম। কৈশোরে এই প্রথম কাউকে ভাললাগা।
যতই ভালো লাগুক, মরে গেলেও কাউকে ভালো লাগাটা জানানোর মত সাহস আর অবস্থা আমার ছিল না। বয়সের সাথে সাথে অনেক বেশি অপরিণতও ছিলাম তখন। তাই তো কখনো কিছু বলাও হয়ে ওঠে নি। সপ্তম শেণী মাত্রই শেষ করলাম। খবর পেলাম সে স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমার কিছুতেই তার কিছু এসে যায় না তখন। কিন্তু আমি জানি আমার কেমন লাগছিল। আর কিছু বললাম না এখানে।

আমার আরো একজন বন্ধু ছিল। ক্লাশ ওয়ান থেকে। সে 'সুদিপ্তা।' বন্ধুত্বের জায়গা থেকে তার স্থান আমার লাইফে অনেক উপরে। অষ্টম শেণীর শেষের দিকে আমার লাইফে আরো একজনকে অনুভব করলামম। সকলে জানে সে কে? তার ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- আমরা একটা কোচিং করতাম। সেখানে আমিই সর্বেসর্বা। পড়ালেখায় অন্যান্যদের চেয়ে অনেকদুর এগিয়ে ছিলাম। সর্বেসর্বা এরকম একটা ভাব ছিল মনে মনে। আমার রাজ্যে ভাগ বসাচ্ছিল আর একটা মেয়ে। প্রতিদ্বন্ধীর প্রতি আমার আজন্ম ভালবাসা। অন্তত আমার আর আরফাতের সর্ম্পকের দিকে তাকালে যে কেউ সহজে বুঝতে পারবে। মেয়েটির প্রতি আমার যতটা না সর্ম্পক ছিল, বন্ধুদের দ্ধারা তা বহুগুণে বর্ধিত হয়ে লাইভ টেলিকাস্ট চলতেছিল। এতে তাদের লাভই হচ্ছিল। মজাও নিচ্ছিল। ভাল ছেলে হিসেবে আমার র্যাংকিং ১ বরাবরই। সেটা ক্রমাগত নামতে থাকল। আর কিছু বলব না এই জায়গায়। আমি কোনো বন্ধুকে হারাতে চাই না। অনেক কস্টে যা ভুলে গেছি তা আর মনে করতে চাই না।
যা লেখার থাকে সবসময় তা লেখা যায় না। এটা একটা মহাঝামেলা। যাদের লেখা অনেকেই পড়ে, তাদের জন্য লেখালেখি অনেক ভেবেটেবে লেখার মতো একটা কিছু। তাই সবকিছু সবাইকে বলি না, বলা যায়ও না। এই যেমন, অনেক জ্বর, কাউকে বলি না। খুব মনখারাপ, শেয়ার করি না। পাটা মচকে গেল, ব্যথায় মরে যাচ্ছি, বলতে ইচ্ছে হয় না। বলি ততটুকুই যতটুকু বলা যায়। আমার কষ্টে কার কী এসে যায়? কষ্ট বলে বেড়ানোর জিনিস নয়, কষ্ট বয়ে বেড়ানোর জিনিস। কষ্ট ভাগাভাগি করলে সবসময়ই যে কষ্ট কমে, তা নয়; কখনো-কখনো এর দাম কমেও যায়। আমার কষ্ট আমার কাছে অনেক দামি। কে পারবে এর দাম দিতে? কার আছে এমন ঐশ্বর্য? জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের একটা গান আমি প্রায়ই গুনগুন করে গাই, আমার স্বপন কিনতে পারে, এমন আমীর কই? আমার জলছবিতে রঙ মিলাবে, এমন আবীর কই?
যা হবার, তা-ই হবে। এতো ভেবে কী হয়? জীবনটা হুট করেই থমকে গেছে? থাকুক না! এই ফাঁকে একটুখানি বেঁচে দেখি তো কেমন লাগে! সবাইকে সাথে নিয়ে! তবে ভালবাসা বলতে আমার অতটুকু, এর বাইরে কিছু নেই।
হয়তো বলবে- "এর বাইরে ভালোও কি কাউকে লাগে না?" "লাগে তো। হৃদয় টানে সবাইকে। কিন্তু বাঁধনে জড়াই না। ফুল মাঁড়িয়ে মন্দিরদর্শন আমি করি না। ক্লিয়ার?"
আমিরুল ইসলাম
২০ মার্চ, ২০১৭

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

খারাপ তবে ভন্ড নই

আমার আমি
ডিফারেন্স টা এইখানে, আমি শত মাইল দূরে থেকেও মা বাবাকে বলি কি হচ্ছে, কি করি। মেয়ে বন্ধু হয়েছে অনেক? বাসায় জানিয়েছি। একজনকে ভালো লেগেছে? বাসায় বলেছি। কোথাও গিয়েছি যেখানে যাওয়া উচিত না? বাসায় বলে। মা একবার না করেছে, কিছু খাইনি মেয়েদের কাছ থেকে জীবনে।

দূরে দেশে, কি করি না করি আমি নিজে না বললে বাসায় জানার উপায় নাই, হাল্কা হাসি দিয়ে বাণ্ধবীদের সাথে তোলা সেল্ফিও বাসাতে আমি নিজেই পাঠাই, যেন বাইরে থেকে কেউ গিয়ে না বলতে পারে কখনো," আপনার ছেলে এই করেছে, সেই করেছে! "
ভুল করে ফেললে যতবড় ভূল ই হোক সে, বাবাকে জানিয়েছি, মাকে জানিয়েছি। আমি মিথ্যা ভালো বলতে পারিনা, ধরা খেয়ে যাই। বিশেষ করে আম্মুর কাছে।

আমার বাসায় আমার লুকানোর কিছুই নাই। প্রথম কোন মেয়ের হাত ধরেছি সে থেকে শুরু করে কখন কোথায় একসাথে বসে ফুচকা খেয়েছিলাম, সে আলোচনাও আমি বাসায় করি।
অনেকে আছে যারা বলে, দোস্ত, ফেসবুকে তো যা তা লিখছিস! বাসার কেউ দেখে না? আত্মীয়-স্বজনরা দেখে না? টিচাররা দেখে না? সত্যি বলছি- আমার লিস্টেও সবাইকে রাখি। সব ওপেনে লিখি। কেউ ঝামেলা করে না! কারণ তারা আমাকে জানে! বেশ ভালোমতন জানে! কারণ আমি জানাই, সব জানাই! আমার কোনো কিছুই গোপন নয়! যাদের ঝামেলা হওয়ার কথা তাদের কিছু হয় না, যাদের কিছু হওয়ার কথা না, তাদেরই যত টেনশন!

কারো জন্মদিনে আমি কিভাবে উইশ করবো, কবিতাটায় কি লিখা থাকবে, কি থাকবে না, সে বিষয়টা আমার, একান্তই আমার। কার সাথে কখন চ্যাটিং করব, সেখানে কি লিখব, কোন ইমো ইউজ করব আমার ব্যাপার। কাকে কি নামে সম্ভোধন করব, কিভাবে তার দিকে তাকবো সেসবও সম্পূর্ণ আমার! আমি লুকোচুরি কিছু করি না! আমার সে প্রয়োজন পড়ে না! কারণ আমি এমন কিছু করি না। ওসব পছন্দও করি না। তারা সেসব ভালোমতন জানে। আমাকে তারা বিশ্বাস করে, কারন আমি বিশ্বাসটা অর্জন করেছি! কোনো খারাপ কিছু আমি নিজের থেকে বললেও তারা বিলিভ করে না, কারণ তারা আমার মুখের চেয়ে কাজে অাস্থা রাখে বেশি। কোন কাজটা মরে গেলেও আমার দ্ধারা করা সম্ভব নয় তারা বেশ ভালোভাবে জানে! তারা বেশ ভালোভাবেই জানে আমাকে মেরে ফেললেও কোনো মেয়ের হাত ধরা আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ এই যে বিশ্বাস, এটা আমি অর্জন করেছি।

ডিফারেন্স টা এইখানে, তোমার মত মা বাবার কাছে ভালো সেজে, ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ আমি দেইনা। আমি খারাপ, ওপেনলি। আমি ভালো, প্রাউডলি! তোমার কাজ-কর্ম বাসায় জানেতো?

আমিরুল ইসলাম
০৭ মার্চ, ২০১৭

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

আজাইরা পাব্লিক


কেউ যদি আপনার প্রেমিকা কেমন সেটা যাচাই করার জন্য তার ছবি দেখতে চায় তাহলে তাকে ছবি দেখাতে যাবেন না। যে মানুষটা শুধুমাত্র চেহারা দিয়ে একটা মানুষকে যাচাই করতে আসে, আপনি আগে তাকে যাচাই করে নিন।

কোনো বন্ধু বা কেউ যদি আপনাকে চ্যালেন্জ্ঞ করে বলে,এই প্রশ্নটার উত্তর দে তো,দেখি তুই কত ব্রিলিয়েন্ট,তাহলে আপনি তার প্রশ্নটি শুনবেন না। সে প্রশ্নটি পাড়লেও আপনি তার উত্তর দেবেন না। আপনি পারলেও দেবেন না। মেধা জিনিসটা এত ঠুনকো নয় যে একটা প্রশ্ন দিয়ে আপনাকে মূল্যায়ন করা যাবে।

বিয়ে ঠিক হওয়া মাত্রই কেউ যদি আপনার স্বামীকে মূল্যায়ন করার জন্য জিজ্ঞাসা করে বসেন- 'তিনি কি করেন?' তাহলেও তাকে জবাব দেওয়ার কোনো দরকার নেই। তিনি কর্মক্ষেত্রে কি করেন' একটা মানুষকে মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট নয়।

আমার আন্টির জন্য যখন কেউ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসত, প্রথমেই বলত, ছেলে অনেক বেতনে চাকরি করে। অনেক বড় ব্যবসায়ী! বাবা কি করে,চাচা কি করে! কখনো বলে না ছেলেটা মানুষ হিসাবে কেমন? একজন অহংকার করে বলেছিল ছেলে আমেরিকা থাকে ! আমার আন্টির জবাব ছিল- আমি বাংলাদেশে থাকি!

কাল একজন আমাকে বলেছে, চুয়েট আমাকে গুণে না। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আন্টিকে ফোন করে জানালাম। আন্টি বলল- তুই কেন কষ্ট পাচ্ছিস? কষ্ট তো তোর তার জন্য পাওয়া উচিত। বলদটা চুয়েটে টিকেও মন মানসিকতা ঠিক করতে পারল না। গাধা যখন ভার বয়, তখন সে গাধা। ভার নামিয়ে রাখলেও সে গাধাই থাকে। চুয়েটে টিকুক আর চুয়েতে, আচরণ গতিসীমা না জানলে চুতমারানি গালই শুনতে হবে আজীবন।
জায়গা এক থাকে না। এটা পরিবর্তনশীল। এটা নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। বরং আমি কে সেটাই বড় দরকার। সবচেয়ে বড় দরকার একজন ভালো মানুষ হওয়া। হিটলারও যোগ্য ছিল, চেঙ্গিস খানও যোগ্য ছিল, বিরল প্রতাপশালী ছিল, অথচ মানুষ ফকিন্নি শেখ সাদীকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে।
জীবনে অনেক কিছু পার করে তবেই এ জায়গায় এসেছি। যাত্রাটা এত স্মুথ ছিল না। গ্রামের ছেলে আমি। গ্রামেই বেড়ে ওঠেছি। হ্যাঁ, সবখানে গোল্ডেন পেয়েছিলাম। ডাবল, ট্রিপল সব সেন্ঞ্চুরী আছে। তবে অনেক দৌড়াদৌড়ি করে রানগুলো তুলেছি। অনেক কষ্টের এ অর্জনকে কেউ এক বাক্যে হেয় করলে খুব খারাপ লাগে, খুব খারাপ। যে ছেলেটা প্রশ্ন বলার আগেই উত্তর বলে দিতে পারে সে কি করে সমাধানের একটা নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করবে? চেষ্টার যে কষ্ট, সে কি করে বুঝবে?
আবার বলছি, "ছেলেটা কোথায় পড়ে" একটা স্টুডেষ্টকে মুল্যায়ন করার জন্য এই প্রশ্নটা যথেষ্ট নয়। তবে যিনি এই একটি প্রশ্নের মধ্য দিয়ে কাউকে মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলেন, তিনি নিজে কেমন প্রকৃতির; তাকে সহজেই মূল্যায়ন করা যায়।

বেদনার ষোল'কলা

বেদনার ষোল'কলা  
ন্ধুরা যখন বুয়েটে পরীক্ষা দিচ্ছিলো আমি তখন শ্যামলী বাসে করে ঢাকা থেকে ফিরছিলাম! আর কাদঁছিলাম! মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়ে ঠিক পানি নয়,যেন রক্ত ঝরছে! জীবনে অনেকবার কেদেঁছি,কখনো চোখ দিয়ে পানি বের হতো না! সেদিন কেন জানি চোখদুটো ঝর্ণা হয়ে ওঠেছিল!

কৈশোর থেকে যদিও বড় হয়ে কি করবো এ ব্যাপারে একটা জিনিসই ভেবেছিলাম, মেডিকেলে পড়বো! ব্যাপারটা আমার কাছে এমন লাগতো, আমার নামের পাশে মেডিকেল ছাড়া আমি আর কিছু ভাবতে পারিনা! আমার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি ভাল ছাত্র  আর ভাল ছাত্ররা মেডিকেলে পড়ে!

কলেজে উঠে লক্ষ্যটা এসে ঠেকলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায়! শহরে ইন্জ্ঞিনিয়ার ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। মেডিকেলে কথা পাড়লেই সবাই এমনভাবে তাকায় যেন মেয়ে দেখছে! বলে মেডিকেল প্রফেশন মেয়েদের! ছাগলের মত মুখস্ত পড়ালেখা সব! জাতীয় মেধারা সব বুয়েটেই পড়ে! সামাজিক স্রোত নাকি ছোটবেলা থেকেই যে এক বদভ্যাস, যত পরিত্যাক্ত যন্ত্রপাতি অথবা যন্ত্রাংশ আছে সব জড় করে পুরনো বাক্সগুলোতে জমিয়ে নিজস্ব ব্যাক্তিগত ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ বানানো, কারণ ঠিক এ দুটার কোনটা তা বলতে পারছি না! ছোটবেলা থেকে প্রচুর জিনিস নষ্ট করে আসছি! এখন অবশ্য দায়িত্বটা আমার ভাই নিষ্টার সাথে নিজের হাতে তুলে নিয়েছে! জীবনে কত মার খাইছি মায়ের হাতে..! তবে, ইঞ্জিনিয়ার আমার হতেই হবে।

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে এ প্লাস পায়, কারণে অকারণে পায়! সেই সামাজিক নিয়ম মেনেই হোক আর মেধার জোরেই হোক, এ প্লাস ঠিকই পেলাম, কিন্তু উঠলোনা বুয়েটের পয়েন্ট! তাতে ক্ষতি নেই, বরং শাপে বর হলো, আমার পরম আরাধ্য ঢাবির ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদই হয়ে দাঁড়ালো একমাত্র লক্ষ্য! অবশ্য ঢাবিতে পড়ার ইচ্ছার চেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সাধটা বেশি ছিল! ইচ্ছা থাকলেই সব হয় নন। আমারও হয় নি!

তবু আমি মনস্থির করে ফেলেছি ততদিনে, সামাজিক যন্ত্রই হবো! ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, হবু শ্বশুর না হলে মেয়ে দেবে কেন? বাবা মা কে জানালাম, আহসানউল্লাহয় ইলেকট্রিকালে পড়তে চাই! তারা আমাকে আশ্বাস দিল, আগে ব্রাকে একটা পরীক্ষা দে। দিলাম। সরকারি ভার্সিটি কপালে ছিল না! বাট ছেলে তো খারাপ ছিলাম না! কমপিউটার সায়েন্স কিংবা ইলেকট্রিক্যাল যে কোনোটাই পড়তে পারবো! ভার্সিটি কি মনে ছিল না। সাবজেক্টটার লোভ ফেলতে পারলাম না! বহু আরাধ্য সাবজেক্ট! মন স্থির করে ফেললাম সিএসসি নিয়ে পড়ে ফেলব। হ্যাঁ,ব্রাক ইউনিভার্সিটিতেই!

আমি জানি আমি বেসরকারিতে পড়ি এটা কেউ আমার কাছ থেকে আশা করে না। আর এমন তো না যে আমি সরকারিতে কোথাও টিকি নাই! কিন্তু আমার একটা স্বপ্ন আছে! আর সেটা ঢাবি বা বুয়েটে পড়া ছিল না! আমার স্বপ্নটা বেড়ে উঠেছে ইন্জ্ঞিনিয়ারিং-কে ঘিরে! আর এজন্য ইন্জ্ঞিনিয়ারিং অনুষদ ছাড়া অন্য কোনো অনুষদে পরীক্ষাও দিই নাই! সেটা ঢাবি হোক, জাবি হোক আর চবি হোক! অনেকেই হয়তো জানে না,(শুধু আমার মা জানে) মেডিকেলে যাতে আমি না টিকি তার জন্য মসজিদে পন্ঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলাম। একথা জানার পর মা কেদেঁছিল পর্যন্ত! আর সে জলের জন্য হয়তো.....

কিন্তু আমার মনে হয়েছিল মেডিকেলে টিকলে বাবা-মা জোর করে আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করাই দিবে! প্যারাময় জীবন,শেষ হয়ে যাব! আমার এটা মনে হয়েছিল,কারণ বাবা শত ব্যাস্ততার মাঝেও মেডিকেল পরীক্ষার আগের রাতে চিটাগাং শহরে এসে গিয়েছিলেন। এসে মোবাইলটা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলেন উত্তেজনায়! অথচ আমার সেন্টার পড়েছিল মাত্র দু'মিনিটের পথ চট্টগ্রাম কলেজে। এর পরে ঢাকা আসলাম চারবার,সিলেট গেলাম। বাবা একবারও সাথে ছিলেন না! আমি বুঝতে পারি বাবা-মার কত আশা ছিল ছেলে মেডিকেলে পড়বে...

অথচ কারো আশা পূরণ হয় নি! না আমার,না বাবা-মার। না সময়ের,না স্রোতের! এভাবেই গেল আমার বছরটা। কেবল অপ্রাপ্তি দিয়েই!

তবে একটা জিনিস আমি অস্বীকার করতে পারি না। সেটা হলো- জীবনের শ্রেষ্ট শিক্ষাগুলো আমি এই বছরই পেয়েছি! ব্যর্থতার থেকে,সমাজ থেকে,পরিবেশ থেকে,বাস্তবতা থেকে, সর্বোপরি নিজের থেকে....


শুভ বিদায় ২০১৬
ডায়েরি'১৬

৩১.১২.২০১৬

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

শিরোনামহীন (স্কুলজীবন)

পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউশন 
স্কুল লাইফে এমন একজন ছিল যার জন্য পাশের জায়গাটা রাখা হত, কোচিং-এ কিংবা সকালবেলার ইংরেজি প্রাইভেটে। ক্লাশের সবার পরিচিত এক মুখ ছিল যে প্রতিদিন স্যারের বকুনি খেত, 'বাঘিনী' নামের খেতাব পেয়েছিল অদ্ভুদ চাহনির জন্য! ক্লাশে এমন কেউ কেউ ছিল যারা ক্লাশে এসে বই রেখেই টেবিলের উপর বসে শুরু করে চার-ছক্কা হাঁকানোর কাহিনী। কিছুক্ষণ টেন্ডুলকারের, আর কিছুক্ষণ নিজের। চলে গাল মারার মহা উৎসব সমানতালে। আর সাথে সাথে অদ্ভুদ সব ঝগড়া! একজন আরেকজনকে কলম মেরে রেখে দেওয়া, তারপর সারা মাঠ দৌড় করানো!
.
এমন কেউ ছিল যারা ক্লাশে এসেই শুরু করে দিত তার কল্পপ্রেমের অস্থির গল্প, আর টেবিলের উপর বসে অনেকেই মহা উৎসাহে সেসব শুনে, তাল যোগায় আর হাসে! ছিল ক্লাশে এসেই বন্ধুদের সাথে অস্থির আলিঙ্গন, কিংবা কোনো একদিন ক্লাশের কারো সাথে ঝগড়া শেষে একে অপরকে ছুটির পর দাঁড়াতে বলার হুমকি! ছিল মেয়ে বন্ধুগুলোর দিকে ননস্টপ কিছু ছেঁড়া কাগজের ছোঁড়াছুড়ি, যেখানে লেখা থাকত কিছু কথা, একেবারে অর্থহীন, আবেগ আর পাগলামিতে ভরা! ছিল ভীড়ের মধ্যে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে দুজনের কানে কানে কিছু কথা, যার কোনো অর্থই নেই! অথচ কতই না গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো তার কাছে, যে কথাগুলো শুনার অধিকার পায় নি!
.
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ক্লাশে ৮০ জন ছেলে থাকলে ৮০ টা গ্রুপ ছিল আমাদের! সবাই আবার আন্তঃসম্পর্কযুক্ত! সব গ্রুপ মিলে আবার একটাই গ্রুপ, একটাই পরিচয়- " আমরা জিএমসি'১৪ " ! কিছু মজার গ্রুপও ছিল! যেমন-পেনিক কমিটি (আতঙ্ক কমিটি), কোয়াইশ গ্রুপ! বাকিগুলোর নাম ভুলে গেছি! কেউ মনে করিয়ে দিলে খুশি হব। ক্লাশের সবচেয়ে দুস্টু ছেলেটার নাম 'সরওয়ার'। ডানপিটেরা হল এক নম্বরে ওয়াহিদ, তারপরে আসে সাদেল, রুবেল, আসাদ সহ অনেকে!
.
* * * * * *
এরপর লাইফে অনেক উত্থান-পতন, কত পরিবর্তন, অথচ সবকিছুর পরও একটা জিনিস এখনো টিকে আছে! স্কুল জীবনের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব! সেদিনের ফাজলামি, সিট ধরাধরি, মারামারি, গল্প, ফাঁকাফাকি করতে করতে গড়ে ওঠা সে সম্পর্ক! সে বন্ধুত্ব। ইন্টারনেটের যুগে হঠাৎ কাউকে খুঁজে পেলে 'হাই' টা বলার পরই শুরু হয় আবার ফাজলামি। সব ভুলে আবার সবাই ফিরে যাই সে সময়টাতে, যেন পুনঃজন্ম নিয়ে মানুষগুলাতে আবার ফিরে এসেছি! গ্রুপ তৈরি! সবাইকে এড! ফাজলামির এক পর্যায়ে গ্রুপ ত্যাগ! আবার ঠিক তখনই কেউ কেউ কর্তৃক আবার স্বয়ংক্রিয় এড হয়ে যাওয়া! এটাই বন্ধুত্ব! স্কুল লাইফের বন্ধুত্ব। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু পাল্টায়, শুধু পাল্টায় না স্কুল লাইফের বন্ধুত্ব! সেই নাম, যা দিয়েছিল সেদিন, বন্ধুরা জোর করে! আজীবন সে নামটা থেকে যায়!
.
স্কুলে লাস্ট বেন্ঞ্চে বসে সারাদিন দুষ্টামি করতে থাকা ছেলেদের বা মেয়েদের গ্রুপটা আজ আর নেই। একজন আরেকজনকে দেখেছিলাম প্রায় বছর পাঁচেক, কিংবা পুরো দশ! আজ সবচেয়ে গম্ভীর ছেলেটা ক্যাম্পাস কাঁপায়, কলেজ কিংবা ভর্সিটির! অথচ সবচেয়ে চটপটে মেয়েটা বিয়ের পর স্বামীর হাত ধরে চলে গেছে বাইরে! যে ছেলেটা টেবিলের উপর বসে সবাইকে তার প্রেমের গল্প শোনাত, সে আজ নির্জন নিরালায় বসে কবিতা লেখে, বেলা-অবেলায় বালিশ নোনতা করে, কিংবা নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়া টেনে কলিজা পোড়ায়, ফুসফুস পোড়ায়, আর স্মৃতির ভাবনায় ভেসে ভেসে স্বস্তি খুঁজে ফেরে! যে ছেলেটাকে বা মেয়েটাকে সবাই 'ব্যাটারি' বলে খেঁঁপাতো অল্প বয়সে চশমা নেয়ার জন্য, মানুষগুলোর সবাই আজ নিজ নিজ 'চশমা'টা ছাড়া পড়তে বসে না!
.
চারপাশের মানুষগুলো কেমন বদলে যাচ্ছে, বদলে যাবে! তবুও কিছু তো থেকে যায়। রোমান্টিক কোনো গান বা পরিচিত কোনো পারফিউম! কিংবা 'ওল্ড স্কুল'এর 'আজ রাতে কোনো রূপকথা নেই' অথবা 'সে যে বসে আছে একা একা' গানগুলো শুনলে বা হুট করে সে পরিচিত পারফিউমের কড়া গন্ধ পেলে মনে পড়ে যায় পরিচিত মানুষটাকে। মাঝখানে যেই আসুক..., নতুন তন্বী অথবা আটলান্টিক মহাসাগর। পুরনো মানুষগুলোকে মনে পড়ে মাঝেমাঝে, একটি দুটি বিকেল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়, অথবা জোৎস্নাভরা কোনো নিশি গভীর থেকে গভীর হয়। পুরনো রাগ-অভিমান, কোচিং শেষের ঝগড়াটা, ছোঁড়ে মারা কাগজের বোবা অনুভূতিগুলো, কিংবা সেই বাঘিনীকে মনে পড়ে! মনে পড়ে হাই স্কুলের সেই গাঢ় নীল বা খুব ছোটবেলার সাদা শার্টে কালো কলমের আঁকিবুকিঁ! কিছু মানুষতো হারিয়ে যায়, জীবন থেকে, কিন্তু সেই সাদা বা গাঢ় নীল ইউনিফর্মগুলো ঠিকই লুকিয়ে থাকে, পুরনো কাপড়ের ভাঁজে, কিংবা কোনো না কোনো ড্রয়ারে! পুরোনো বোবা সাদা-কালো আবেগগুলোও লুকিয়ে থাকে অস্থির চিত্তের মানব মনের ঝাপসা রিলে! সময়ে-অসময়ে ধরা দেয়, কিছু ভাবনা ফুরোয় না, আর কিছু বিকেল দীর্ঘ হয়, আর কিছু রাত গভীর হয়.....
.
আমিরুল ইসলাম

০৬-০৫-২০১৬

লিখালিখির পাঠ

লিখালিখির পাঠ
ইদানিং সবচেয়ে বেশি শোনা প্রশ্নঃ আমিরুল, তোর লেখালিখির শুরু কি করে হল ?

প্রশ্নটা যতবার শুনেছি , মুচকি হেসে এড়িয়ে গেছি। কিছু গল্প আছে, যা বলার জন্য উপলক্ষ লাগে, একটা মানানসই পরিবেশ লাগে, বোনাস হিসেবে একটু আধটু উৎসাহ থাকলে মন্দ হয় না। এই গল্পটা ঠিক সেই রকম।
.
আমার লেখালিখির শুরু চিঠি লেখা থেকে। স্কুলে থাকতে এক জুনিয়র মেয়েকে কে প্রথম লিখেছিলাম। তাও একটা ছোট ভাইয়ের অনুরোধে তার গার্লফ্রেন্ডকে। তখন আমি ক্লাশ সেভেনে সম্ভবত। পরে আরো অনেকবার অনেক জনকে লিখে দিয়েছিলাম তার গার্লফ্রেন্ডকে দেবে বলে। ছোটবেলা বড় কোন দোষ বলতে এটাই। এছাড়া আমার আর কোনো দোষ কেউ দেখাতে পারবে না। আর এই ব্যাপারটাও জড়িতরা ছাড়া বাকি আর কেউ জানত না। তাই আমি পুরদস্তর ভালো ছেলেই ছিলাম সবার কাছে।
.
ক্লাশ এইটে শেষের দিকে এক বান্ধবীকে চিঠি লিখেছিলাম। হ্যাঁ, প্রেমপত্রই বটে। তবে ঠিক চিঠি নয়, পুরো একটা ডায়েরি। পুরোটাই আমার লেখা। আর লেখার মাঝে কিছু কবিতাও ছিল। কবিতাগুলো কি ছিল ঠিক ভুলে গেছি। তাকে কবিতাগুলো আমাকে একবার দেখাতে বলার ইচ্ছা। কিন্তু তাহলে সেটা ফেরত নেয়া হবে। তাই বলা হয় না। পরে আরো একবার চিঠি লিখেছি তাকে। ও হ্যাঁ, ডায়েরিই...

এভাবেই শুরু। বয়সের সাথে সাথে চিঠির লাইনের সংখ্যা বেড়েছে । কমেছে অক্ষরের আকার,এসেছে অনুভূতি , আবেগ আর বেগ ।
.
কৈশোরে কেবল তার জন্যই লিখেছিলাম প্রথম ভাললাগা। সে শুধু চিঠি ছিল না , চিঠির ভাঁজে কালচে খয়েরী শুকনো গোলাপ ছিল। লেখার ভেতরে স্বপ্ন ছিল, স্পর্শ ছিল, নির্দোষ চাওয়া পাওয়া ছিল, ছিল না শুধু যুক্তিতর্কের বালাই। এরপর যা হয় আর কি , // তুমি আর নেই সে তুমি তে// গল্পটা ফুরোল , নটে গাছটি মুরোল। চিঠিতে ভালবাসিও বলেছি, যদিও বয়স তখন মাত্রই পনের ছুঁইছুঁই। এটা যে খুব বেশি দোষের ছিল তা কেউ বলতে পারবে না। এখন তো দেখি মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের ছেলে-মেয়েরাও প্রেমপত্র লিখে। হাইস্কুলে ওঠলেই ফেসবুক ইউজ করে। 

যদিও সে ভালবাসা হারিয়েছে, আবেগগুলো আখেরে টেকে নি! তবে গোটা কয়েক চিঠি এখনো আছে। তাকে লেখা, দেওয়া হয়ে না ওঠা সেসব চিঠি।
.
কলেজে ওঠে আরেকজনকেও লিখেছিলাম একটা আস্ত ডায়েরি! তাকে খুব ভাল লাগত, এখনো লাগে। মাঝে-সাঝে তার কথা মনে পড়লে বাউন্ডুলটা নামিয়ে পড়ি। ও এখন কলেজে ওঠেছে। নতুন জীবন। অনেক ভাল থাকুক সে। তার সাথে আমার প্রেমটা ঠিক যায় না। আমাদের মধ্যে পারিবারিক একটা সম্পর্ক আছে। আমি চাই না আমাদের কারণে খারাপ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। কলেজ লাইফ শুরুর প্রাক্কালে শহরে এসে অনেকদিন তার বাসাতেই ছিলাম। আলটিমেটলি অনেক স্মৃতি জমে আছে।
.
সত্যি বলতে, চিঠিগুলো কাব্য হয়েছে যখন নোনা জ্বল গড়িয়ে গাল, ঠোঁট ভিজেছে। লেখায় প্রাণ এসেছে হৃদয় ভাঙার পরে। ভালেবেসে আবেদনের পর তাকে উত্তর দেয়ার সুযোগটুকু দিই নি। জানি অনেক অভিমান তার, জমে আছে। আমি জানি একদিন সে সব ভুলে যাবে। ভুলে যাবে একদিন তার জীবন নদীতে আমিও বৈঠা বয়েছি কিছু মুহুর্তের জন্য।

সত্যি বলতে আমার লেখায় পরিপক্বতা এসেছে বই এর সাথে প্রেম হল যেদিন থেকে। নিষিদ্ধ, সমাজ অচ্ছুৎ বইয়েরা আমাকে ভাবিয়েছে , জানিয়েছে , চোখের ভ্রান্ত আবরণটা টেনে ছিঁড়ে আমাকে মানুষ বানিয়েছে। নিজের কাছে কৃতজ্ঞ বোধ করি অন্তত পা ভেঙে হাটঁতে শিখেছি। পিচ্ছিলে হাটার সাহস না করলে দৌড়াতে শিখতাম-ই না আর শেষমেশ তো ফড়িং হয়ে উড়েই বেড়াচ্ছি। আর একা উড়ছি তাও তো না , সমস্ত শুভস্মম আমার সাথেই আছে। অশুভ আমাকে স্পর্শ করার সাধ্য কই !
.
খেলাধুলার প্রতি ছোটবেলায় আগ্রহ ছিল আর দশটা ছেলের মত। কিন্তু আমি যখন খেলব, ঠিক তখন আমার বন্ধুরা অনেক দুর এগিয়ে গেছে। জুনিয়রদের সাথেও খেলতে ভালো লাগে না। বুঝে গেলাম খেলাধুলা আমার জন্য আসেনি। আমার আরো একজন সাথী ছিল। সাইদ মামা। সে খুব ভালো খেলত। বইমেলায় আমরা প্রচুর বই কিনতাম। তবে প্রথম দিকে পড়া বেশিরভাগ বই-ই সাইদ মামার ছিল। পরে বইয়ের মজাটাই পেয়ে গেল। স্কুল লাইব্রেরি থেকে বই চুরি করা শুরু। বিদেশি লেখকগুলোর সাথে পরিচয় সেখানেই। ব্যাগে যত পারি বই ভরে নিতাম কেউ না দেখে মত করে। সাংস্কৃতিক নানা ইভেন্টে অংশ নিতে আমরা উপজেলায় যেতাম স্কুল থেকে। সবাই জড়ো হতাম লাইব্রেরি। সেটাই ছিল বই চুরির শ্রেষ্ট সময়। পরে আমি চলে আসার পর ছোটভাই অনিক কেও টেকনিক শিখিয়ে দিলাম। এটা কোনো পাপ মনে হত না আমার কাছে সত্যি বলছি! কারণ বইগুলো আমার মনে হয় না আর কেউ পড়ে। অথচ অনেক দুষ্প্রাপ্য-বিখ্যাত বই সেখানে ছিল।
.
এভাবে পড়া-লেখা শুরু, একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে আলাদা একটা জগৎ! এখনো থাকি নীলক্ষেত। সময় পেলেই বই খুঁজতে যাই। আর ফেসবুকে নিজেও কিছু লেখার চেস্টা। বাজে লেখনির কারণে অনেকের বিরক্তির একটা পাত্র আমি। সবাই আমাকে ভাল লেখি বলবে এরকম একটা আশা কাজ করে। আশা করতে করতে আসলে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু লেখালেখির মাঝে একটা আলাদা প্রশান্তি আছে। নিজেকে বলি- আমিরুল, বদলে যেও না । যাই পারো লিখে যাও, হেরে যেও না।

১১ মার্চ, ২০১৭