মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

একটা আম বড় হয়ে ডুমুর হয়ে যায় না সত্য, তবে স্বাদটা ঠিকই পাল্টে যায়

তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। মন আমার রোমান্সে ভরপুর! কমার্সের এক গেদি আমাকে এসে বলল, তুমি কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাও? হৃদয়ে আমার দোলা দিয়ে গেল!
জিজ্ঞেস করলাম, কার সাথে?
- আছে একজন, আমাদের ব্যাচে, কমার্সে, ও তোমাকে খুব পছন্দ করে।
- (সায়েন্স ডিমান্ড ছিল। তবুও বললাম) তাই? (   ), কবে থেকে?
- একদম প্রথম দিন থেকেই!
- তিন মাস ধরে আমার উপরে কেউ ক্রাশ খেয়ে বসে আছে আর আমি জানিই না! 
- চাইলে আমি কথা বলি, ও তোমার সাথে কথা বলুক।
- আচ্ছা! (একটা হার্ট বিট মিস হওয়ার ইমো হপে)  😂

একদিন ক্লাস শেষে, আমি কলেজ মাঠে, ওই মেয়ের সখিরা তাকে ঠেলে পাঠালো আমার কাছে।
সে আসিলো  , কিছুক্ষণ থাকিয়া কোন কথা না বলিয়াই আবার এক দৌড়ে ফিরে গেল সখিদের কাছে।
( চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কোনো সুবিশাল সুবিখ্যাত কলেজে পড়া কোনো মেয়ের কাছে এমন আচরণ আমাকে যানপরনাই অবাক করে।)
যেন বাংলা সিনেমা দেখলাম, এত লজ্জা, আহ! উহাই শেষ, এরপর সে লজ্জায় আর আমার সামনেই আসে নাই!  এইভাবেই আমি ছ্যাকা খাইলাম , এমন একজনের কাছে , যে আমাকে ভালবেসেছে কলেজ জীবনের একদম প্রথম দিন থেকে! 
হয়ত আজও সে আমায় বালুবাসে! 
--------------------------------------------------------------------------------------------------
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। ক্লাস নাইনের এক গেদি এসে আমাকে বলল, ভাইয়া আপনি ফ্রেন্ডশিপ করবেন?
(একটা হার্ট বিট মিস হওয়ার ইমো হপে )
জিজ্ঞেস করলাম, কে?
সে আমাকে একটা চিঠি দিল!
(আরেকটা হার্ট বিট মিস হওয়ার ইমো হপে)
চিঠির মোটামুটি সারমর্ম - এই পর্যন্ত অনেকেই আমাকে ফ্রেন্ডশিপের আবেদন জানিয়েছে, এই প্রথম আমি কাউকে নিজে থেকে ফ্রেন্ডশিপের আবেদন জানাচ্ছি।
একটু অবাক লাগল, কলেজ বিল্ডিং আর স্কুল বিল্ডিংয়ের মাঝে বিশাল মাঠ, স্কুল বিল্ডিংয়ে আমাদের যাওয়া পড়ে না, কিন্তু সে আমাকে খুঁজে পেল কিভাবে?
বলে রাখি, আমার কাছে তখনো ফ্রেন্ডশীপের অন্য মানে ছিল। সেসময়ে কোনো মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশীপ, লা হাওলা আলা কুআ'ত!
যাই হোক, আমি চিঠির উত্তরে এইসব ফ্রেন্ডশিপের ক্ষতিকর বিষয় তুলে ধরে লিখে তাহার বান্ধবি মারফত পাঠাইলাম।
পরদিন তাহার বান্ধবী আমাকে আরেকটা চিঠি দিল -
"আপনি এত নীচ, আপনার মন এত ছোট, আমি ফ্রেন্ডশিপের কথা বললাম আর আপনি এটাকে এভাবে দেখলেন!?"
আমি বিহ্বল হয়ে গেলুম, কি লিখিলুম, আর সে উহাকে কি ইন্টারপ্রিট করিল!   গায়ে আমার আগুন। 😡
আরেকটা চিঠি লিখলাম, এত কঠিন ভাষায় যে আশা করেছিলাম এরপর সে আমাকে আর কোন চিঠিই দেবে না। ( কি লিখেছিলাম সেগুলো আর মনে নেই )
এরপর আবার চিঠি, তাহার ক্লাসমেট বন্ধু মারফত -
"ভাইয়া, আসলে আপনার চিঠি পড়ার পর থেকে এই ফ্রেন্ডশিপের প্রতি আমারও আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেছে, আমার কাছেও এখন মনে হচ্ছে এসব ভাল না!"
আহ!! এইভাবে একটা মেয়ের ফ্রেন্ডশিপের আগ্রহে ঠাডা ফেললাম আমি? জাতি কি এমন রোবট চেয়েছিল! 
যদিও এহেন ব্যাপারগুলো এখানেই শেষ। এর পর থেকে ইতিহাস! কাউকে রিকুয়েস্ট না দিই, কারো রিকুয়েস্ট ফেরত দেয়ার মত উদারতা আর দেখাই নি। একটা আম বড় হয়ে ডুমুর হয়ে যায় না সত্য, তবে স্বাদটা ঠিকই পাল্টে যায়। 
--------------------------------------------------------------------------------------------------
আমিরুল ইসলাম
০৫. ০৮. ২০১৭

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

আমার চাওয়া আর তুমি



চাওয়াটা কি খুব বড় ছিল?
কি জানি? হয়তো বা!
তবুও এই একলা ঘোর লাগা
মাঝরাত চাই নি তো কখনো
অন্তত দুটো সাদা হাত থাকার কথা ছিল
আমার হাতের মুঠোয় বন্দি
দুটো আলুসিদ্ধ থাকার কথা ছিল
হালকা গোলমরিচ মাখানো!
প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে যেতে পারতো
পারতো না? গহীন কোনো অরণ্যতে ...

বিশ্বাস করো, সত্যি বলছি
আমার অনেকগুলো বেঁচে যাওয়া সময়
তোমাকে সম্প্রদান করে দিতাম
একান্ত নির্জনতায়, একনিষ্টভাবে
আমার সিমেও থাকতে পারতো
কোনো পার্টনার নাম্বার
বনে যেতে পারতাম একনিষ্ট ভোক্তা
কোনো না কোনো সিম কোম্পানির

শুধু একটিবার যদি বুকে মাথা রাখতে
জীবনটা সার্থক হয়ে যেতে পারতো
পারতো না? ভালবাসার জ্বরে
কেঁপে কেঁপে আরো একটিবার জন্ম
হতে পারতো দুজনা মিলে
একটি একক ভিন্ন সত্তার

অনেকদিন ভালভাবে বেঁচে থাকতে থাকতে
আমি আজ ক্লান্ত, খুন হতে চাই
তোমার হাতে, তোমার চোখের
ওই সাদাকালো টলমলে অংশে
তোমার কাজলে দেবে কি সুযোগ?

হয়তো ঘোর লাগানো মাঝরাতে
অকারনে ঘুম থেকে জাগিয়ে
অবাধ্য ছেলের মত সেলফি
পাঠাতে বলতাম, আর একটা চুমো,
তুমি ঘোরের মাঝে জড়ানো গলায়
দুটো'বার না বলে ঠিকি পাঠিয়ে দিতে
বহুল প্রতীক্ষিত রক্ষিত সম্পদ,
আরেকটা বার ধন্য হতাম জন্মে
প্রেমটা জমে ক্ষীর হয়ে যেতে পারতো
পারতো না? গহীন কোনো অরণ্যতে ....

এক জীবনে যদি তোমাকে পাই
আর কি চাই জীবনে?
কেউ নাই তবে নাই থাক
শূণ্যতা দিয়ে পূর্ণ থাক হৃদয়
তোমাকে জায়গা দেব বলে
যদি কভু সুযোগ মেলে ...
.
 আমিরুল ইসলাম

শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

বালের বন্ধু

সবার জীবনেই একটা বালের বন্ধু থাকেই। এদের মারেন, ধরেন, কাটেন, কেটে লবন মরিচ লাগিয়ে দেন। কিন্তু এরা যাবে না। কারন এরা বাল। এরা যাবেও না, আবার থাকেও না। শুধু জ্বালাইতেই আসে।

courtesy: Internet
- দোস্ত পকেট খালি। কালকে তোর ভাবীর সাথে দেখা করবো কিছু টাকা ধার দে না।
- আগে যে টাকা পাইতাম। ওইখান থেকে কাটি রাখ।

- আজকে আমার ভাড়া তুই দে আমি গতকাল দিছি।
- কেনো ভুইল্লা গেছো!! গত বছরের পহেলা ফাল্গুনে বিকেল বেলায় তুমি ঝাল মুড়ি খাইতে খাইতে যে আমার রিকশায় উঠছিলা। নামার আগে যে বলছিলা পরে দিবো, দিছিলা আর?

- বাসা থেকে বিয়ে ঠিক হইছে রে।
- বলিস কি। এ কেমন কথা। থাক মন খারাপ করিস না। এইদিকে আয় তোকে কিছু টিপস দেই। বাসর ঘরে .............

- এক টান বিড়ি দে না। এর আগের টাতো তুই শেষ করছিস।
- দেখো বন্ধু, অন্যের বিড়িতে হাত দেওয়া মানে অন্যের বউ এর গায়ে হাত দেওয়া। so don't touch my wife।
- তাইলে আমার আগের বউরে তুই টানছিস কেন।
- মনে রাখবা, তোর বউ মানে আমার বউ, আর আমার বউ তোর ভাবী।

- ছেলেটা কি কিউট নারে? দেখলেই খাইয়া ফেলতে মনে চায়।
- ধুর এটা থেকে আমার বয়ফ্রেন্ড হট বেশি।
- তোর বয়ফ্রেন্ড থেকে আমার টা হট।
- না আমার টা।
- না আমার টা।
- তোর টা কি?
- হট।
- ও। আমি তো অন্য কিছু ভাবছিলাম।

- ওই তোর বাসা থেকে টাকা দেয় না?
- দেয় তো। কেনো বন্ধু?
- না মানে, তুই ত অনেক দিন কিছু খাওয়াস না। ভাবলাম আংকেল মারা টারা গেলো নাকি, আর্থিক কোন সমস্যায় আছিস কিনা, এই খোজ খবর নেওয়া আর কি।
- এমনে লজ্জা না দিলেও পারতি।
- যাক লজ্জা আছে তাইলে তোর।

- আজকে একটা স্ট্যাটাস লিখছি একটু পরে দেখ না।
- আমাকে মেনশন করে দিস, পরে নিবো।
- প্লিজ এখন পর না। প্লিজ প্লিজ।
- ট্রিট দে তাইলে পড়মু।
- বাল তোর পড়াই লাগবে না। চেগাইয়া মর তুই।

- দোস্ত মেয়েটা আমার বাপ মা ধইরা গালি দিছে চ্যাটে। তুই একটা কিছু কর।
- তোর বাপ কে আগে গালি দিছে নাকি তোর মাকে?
- মনে পড়তেছে না। ওয়েট ইনবক্স দেখলেই হচ্ছে।
- হুম তুই দেখে আমাকে জানা। আর মেয়ের আইডিটাও আমাকে দিস। আমাকে ব্যাপার টা একদম প্রথম থেকে বুঝতে হবে। আচ্ছা মেয়ে কি আমার জুনিয়র নাকি সিনিয়র?
- তুই কি এখন তোর বাপ মায়েরে গালি শুনাইতে চাস?

- জানিস আজকে ছেলেটাকে ধরে জোর করে কিস করছি।
- কোথায় ঠোঁটে?
- আরে না।
- চোখে?
- ধুর।
- কপালে?
- আরে না। তোরাও না। পারিস ও বটে।
- তাইলে?
- হাতের তালুতে। যেভাবে ইংল্যান্ডের রানীর হাত তুলে কিস করে ওভাবে।
- কাল রাতে বৃষ্টি পড়তে পারে। তখন ঠাডা পড়লে তুই ওই ঠাডার মাঝখানে দাড়াই মইরা যাইস।

- আমি মইরা গেলে আমাকে মিস করবি না?
- তোর বাপ রে কইয়া যাবি যেনো তোর মেজবানে খাসি জবাই করে। আমি আবার গরুর গোস্ত খাইলে দাতে আটকায়। নাইলে আমি ভুলেও যাবো না তোর মেজবানে।

ঠাডা অনেক পড়ে, কিন্তু এগুলো মরে না। এগুলোর কই মাছের প্রাণ। এই বন্ধু গুলোই একদিন হাজারো ঠাডার মাঝে আপনাকে ভয় না দেখিয়ে শুধুমাত্র কাছে থেকে বিরক্ত করে বলেই আপনি বেচে থাকার প্রশ্রয় পান। কিছু পাগল থাকে বলেই কিছু পাগলীর উৎপত্তি হয়। বন্ধুগুলোই একদিন বড় হয়ে যায়। কিছু কথা ইতিহাস রয়ে যায় স্মৃতির পাতায়। স্বর্নাক্ষরে লিখা থাকে হাজারো বালপাকনা পোলাপান, মাইয়ার দল। এরা চুপ করে থাকলে গোটা পৃথিবী চুপ। প্রতিটা গ্রুপেই একটা বালপাকনা বন্ধু থাকে। ওটাকে খুঁজে বের করেন। জাতা দিয়া ধইরা রাখেন। যেনো ঠাডা পড়লে দুই জন একসাথে ঠাডা পইরা মরতে পারেন।
আপনার কুকর্মের কথা যদি আপনার বন্ধু না জানে, তবে সে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড না!

আপনার জানাজার প্রথম কাতারে যেন আপনার কিছু বেস্ট ফ্রেন্ড থাকে। চোখ মুছতে মুছতে বলবে, "বাল টা আমারে ছাইড়া আগেই গেলো গা"!

Sep 29, 2017

শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

আমিরুলের গার্লফ্রেন্ড!

"আমিরুলের গার্লফ্রেন্ডের না থেকে যায় না!" ক্লাশের সবচেয়ে কম কথা বলা মেয়েটিও নানা ছুতোয় কথাটা তোলে জানতে চাইবে আসলে কেউ আছে কি না। "সত্যি বলছি, নেই।" "না, আমি বিশ্বাস করি না। প্রেমে পড়ার মত সবকিছু তোমার আছে। তুমি মিথ্যা বলছ।" "সত্যি, কসম বলছি।" "তাহলে হয়ে যাবে। ওয়েট।" "যদি আমার ইচ্ছে না থাকে তো! তখন কিভাবে হবে?" "কি বলো? তুমি বিয়ে করবে না?" এতক্ষণে মানুষটার মুখ হাঁ হয়ে যায়। "হ্যাঁ, করবই তো। করব না কেন?" এই হল সুন্দরী সামিয়ার সাথে কথা-বার্তা।

ভাসির্টি থেকে ফেরার পথে- "আচ্ছা সুহৃদ, লাইফে প্রেম করাটা কি খুব জরুরি?" "না তো! সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা এমনিতে তো বেশ আছি। তাহলে কেন শুধুশুধু প্রেমবোঝা বইতে হবে।" "কিন্তু ওরা যে বলে...!" "যারা প্রয়োজন মনে করে তারা করুক। সবার তো কফিতে রুচি না ও থাকতে পারে।" "হ্যাঁ, তুই ই ঠিক।"

"আচ্ছা, তুমি প্রেম কর না কেন তাহলে?" কি সর্বনেশে কোয়েশ্চেন!

উত্তর দিচ্ছি, ধৈর্য্য ধরতে পারলে শুনুন। সত্যি বলতে কি, প্রেম জিনিসটাকেই আমার ভয় লাগে। এটা সত্যি প্রেম নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি লিখালিখি করি। হিজিবিজি যাই হোক, অনেকে পড়ে তো! এসবের বেশিরভাগ প্রেম সম্পর্কিত। প্রেমের অভিজ্ঞতাই যদি আমার না থাকে তাহলে এসব আসে কোথা থেকে। সহপাঠি আনিকার মতে, কিছু অভিজ্ঞতা তো লাগেই। আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম। তবে লিখালিখিটা আসে মন থেকে। রবীন্দ্রনাথ, শরৎ, বঙ্কিমবাবু এতগুলো প্রেম করে নি। তাদের বেলায় তো প্রশ্নটা ওঠে না।

একটু আগে যেটা বলছিলাম-প্রেমে আমার ভয় কাজ করে। সেটা কি রকম? দাঁড়ান বলছি- ধরেই নিলাম, আমি কাউকে জান-প্রাণ দিয়ে ভালবাসি। কি হবে আমার, যদি কখনো সর্ম্পকটা ভুলে যায়? কিংবা সে যদি কখনো ঘুম থেকে উঠে আমাদের সর্ম্পকটা অস্বীকার করে বসে? অথবা আমারই যদি তাকে আর ভাল না লাগে তারই বা কি হবে তখন? মোটর-সাইকেলে তেল ফুরিয়ে গেলে হাতে টেনে নেয়া যায়। ভালবাসায় রিজার্ভ বলে কিছু নেই। সবটুকুন নগদ।
ধরে নিলাম, নীতিগত ভাবে আমি সৎ তবু কখনো যদি এমন হয় যে, এক সময় হঠাৎ মানুষটাকে আর ভাল লাগছে না! তার হাত ধরে আনন্দ পাচ্ছি না। একসাথে রিক্সায় ঘুরে ভাল লাগছে না। কথা বলতে ইচ্ছে করে না ; মনে হয় সব বলা হয়ে গেছে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে না; তাকিয়ে থাকার আর কিছু নেই। তার চেহারা আমার মুখস্ত। ইম্প্রেস করতে ইচ্ছে করে না ; সে এমনিতেই দিন রাত আমাকে নিয়ে আছে। ইম্প্রেস করার কিছু নেই। কেমন হবে তখন? কিংবা বিপরীত দিক থেকেই যদি এমন হয়? কোথায়, কার কাছে যাব আমি?
 ইচ্ছে করে না, কোন অপরাধে না, কোন কারণ ছাড়াই মানুষটার প্রতি আবেগ ভোতা হয়ে গেছে। একদিন ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম অন্য কাউকে আমার ভাল লাগছে। কী করব তখন? 'ভাল লাগার' ব্যাপারটি তো আর প্লেনিং করে করি নি! কাউকে আর ভাল না লাগলে আমার কী করার আছে? অন্য কাউকে ভাল লাগলে আমার দোষ কেন হবে? আমার আর যাই হোক, তারই বা কি হবে? সে সেটা মানতে পারবে কখনো? আদর করে বাবু ডাকের বদলে যখন গালি আর অবহেলা সে মেনে নিবে কোন জাদুবলে? হতাশা আর দুঃখ তাকে কুরেকুরে খাবে না? কিংবা আত্মহত্যাও যে করে বসবে না তারই বা নিশ্চয়তা কি? তখন কোনদিকে যাব আমি? কিংবা আমাকে যে ভালবাসছে সে তো অভিনয়ও করতে পারে। হতে পারে সে শুধু টাইম পাসটাকেই উদ্দেশ্যে রেখেছে। সবাই-ই যে ভালোবেসে ‘ভালোবাসি’ বলে, তা নয়। সেই ‘ভালোবাসি’টা যে কেউ কেউ ভালোবেসে গ্রহণ করে! সবাই ভালোবেসেই চুমুটা খায় না, স্রেফ চুমু খেতে ভাল লাগে বলেই খায়। তবে কেন এমন কাউকেই চুমুটা খেতে হবে যে ভালোবেসেই চুমুটা গ্রহণ করছে? চুমু খাওয়াটা সুখের, মানছি। তবে কেন সেই সুখ পেতেই হবে যে সুখ অন্যকারোর অসুখ বাধিয়ে দেয়? কোন ভালোবাসায় ভালোবাসা নেই, সেটা কেউ জানবে কী করে?
অনেকের মনে হয়তো একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। কেউ বলে, কেউ বলে না। সেটা হল- সত্যিই যদি আমি প্রেমে না থাকি তাহলে অতশত লিখি কেমনে? তাদের জন্য আমার উল্টো প্রশ্ন থাকল- "যে লোকটা বক্সিং লড়ে সে কি বউকে আদর করে না?" কেউ না করলে সেটা ভিন্ন কথা। সবচেয়ে বড় কথা হল, ভালবাসা থাকে মনে। বাইরেরটা তো কমিটমেন্ট। এ কথা বললে অনেকে আবার আমাকে থামিয়ে দেয়। ব্যাপার না।
  সিঙ্গেল মানুষগুলো কি আসলে খুব একটা একা অনুভব করে? না, তাদের সাথে সব সময় কেউ একজন থাকে। খুব সুন্দর কোন দৃশ্য দেখার পর তারা ভাবে; যেদিন মানুষটার সাথে পরিচয় হবে সেদিন তাকেও নিয়ে আসবে। সিলেটের চা বাগানের চির সবুজের মাঝে এমনি এক দিনে তাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে কেমন অনুভূতিই না হবে! আকাশে কোন বিমান উড়ে গেলে তার কথা মনে পড়ে। কবির সুমনের 'বাশুঁরিয়া' গানটা শোনার সময় তাকে চোখের সামনে দেখা যায়। এক এক লাইনে তাকে এক এক জামায় দেখা যায়। আচ্ছা কাল্পনিক ভালবাসা বলে কী কিছু আছে ? সম্পর্কে যারা জড়ায় তারা না হয় একজন কাউকে নিজের মত করে পায়...যারা জড়ায় না... তাদের কী আসলেই কেউ থাকে না?
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় "ইরোটোমেনিয়া",কারো সাথে সম্পর্ক নেই...সপ্তাহে দু দিন দেখা করার ব্যাপার নেই... কোনদিন কাউকে ফোন করে বলা হয় না স্বপ্ন ভাঙ্গার কোন গল্প...তবু কেন মধ্যরাতে কলকাতার অঞ্জন-মান্না আর আমাদের তাহসান এসে চোখ ভিজিয়ে দেয় ? রুমের বন্ধুদের তাদের গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে আসার পর করা গল্প,আর অলস বিকেল বেলায় কিংবা নির্জন রাত্রিবেলা তাদের মোবাইলে বলা কথাগুলো আপনার বুকটাকে কাপাঁয় কেন? ট্রেনের জানালায় হেডফোন লাগালে আপনার ভেতরে এরকম আলোড়ন সৃষ্টি হয় কেন ? কেউ আপনার সাথে নেই তবু খুব সুন্দর কোন মুভি দেখার পর আপনার গা ছমছম করে উঠে! কেউ আপনার সাথে নেই, শুধু সমুদ্রের ছাতার নিচে কফি খেলে আপনার ভেতরে তোলপাড় হয়...একেবারে অপরিচিত নির্জন নিরিবিলি স্বর্গছেড়া চা বাগানে হালকা বাতাসে যখন নতুন কুড়িঁগুলো অদ্ভুদভাবে দোল খায়,আহ্ কি মধুর সংঘর্ষ,যেন স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে আর বুকের ভেতরটা অদ্ভুদভাবে মোচঁড়ে উঠে,কেমন শূণ্য শূণ্য লাগে চারপাশ। সবাই আছে,কিন্তু কি যেন নেই,কে যেন নেই!
এমন কেন হয় !! জুনাইদ ঈভানের মতে, সিঙ্গেল লাইফের মানুষ গুলো আসলে সিঙ্গেল থাকে না। আসলেই তাই। এরা থাকে 'ডিমেন্সিয়া প্রিকক্স' নামে এক কাল্পনিক জগতে। কখনো দেখা হয় নি ; তবু দেখা হয়েছে লক্ষ লক্ষ রাতে। মাঝে মাঝে একটা মানুষকে নিয়ে আপনি ভাবেন। এই পৃথিবীটা খুব নিষ্ঠুর মনে হলে মানুষটার সাথে কথা বলা হয়। কি কথা হয় মানুষটা জানে না। কথাগুলোও জানে না মানুষটা কে!
যা লেখার থাকে সবসময় তা লেখা যায় না। এটা একটা মহাঝামেলা। যাদের লেখা অনেকেই পড়ে, তাদের জন্য লেখালেখি অনেক ভেবেটেবে লেখার মতো একটা কিছু। তাই সবকিছু সবাইকে বলি না, বলা যায়ও না। এই যেমন, অনেক জ্বর, কাউকে বলি না। খুব মনখারাপ, শেয়ার করি না। পাটা মচকে গেল, ব্যথায় মরে যাচ্ছি, বলতে ইচ্ছে হয় না। বলি ততটুকুই যতটুকু বলা যায়। আমার কষ্টে কার কী এসে যায়? কষ্ট বলে বেড়ানোর জিনিস নয়, কষ্ট বয়ে বেড়ানোর জিনিস। কষ্ট ভাগাভাগি করলে সবসময়ই যে কষ্ট কমে, তা নয়; কখনো-কখনো এর দাম কমেও যায়। আমার কষ্ট আমার কাছে অনেক দামি। কে পারবে এর দাম দিতে? কার আছে এমন ঐশ্বর্য? জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের একটা গান আমি প্রায়ই গুনগুন করে গাই, আমার স্বপন কিনতে পারে, এমন আমীর কই? আমার জলছবিতে রঙ মিলাবে, এমন আবীর কই?
যা হবার, তা-ই হবে। এতো ভেবে কী হয়? জীবনটা হুট করেই থমকে গেছে? থাকুক না! এই ফাঁকে একটুখানি বেঁচে দেখি তো কেমন লাগে! সবাইকে সাথে নিয়ে! তবে ভালবাসা বলতে আমার অতটুকু, এর বাইরে কিছু নেই।
হয়তো বলবে- "এর বাইরে ভালোও কি কাউকে লাগে না?" "লাগে তো। হৃদয় টানে সবাইকে। কিন্তু বাঁধনে জড়াই না। ফুল মাঁড়িয়ে মন্দিরদর্শন আমি করি না। ক্লিয়ার?"
আমিরুল ইসলাম ২০ মার্চ, ২০১৭

বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

অামাদের অবস্থান কোথায়

অামাদের অবস্থান কোথায়? সত্যি তো? সবার জানা দরকার। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বিশ্বের সেরা ২০০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে বাংলাদেশের কোন ইউনিভার্সিটির নাম নেই। মালোয়েশিয়ার আছে, ব্রাজিলের আছে,আর্জেন্টিনার আছে, কোরিয়ার আছে, তুরস্কের আছে, ভারতের আছে এমনকি রাজাকার রাষ্ট্র পাকিস্তানেরও একাধিক ইউনিভার্সিটি এই তালিকায় আছে।
আসুন এবার কারনগুলো দেখার চেষ্টা করি। এ ব্যাপারে আজকে একজন স্যারের লেখা পড়লাম। ফেসবুকে আমি উনার ফলোয়ার। তিনি লিখেছেন, নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাঈ আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই উত্তীর্ন হতে হবে, নোবেল কোটা কোন কাজে আসবে না। এখন আমাদের দেশের কথা চিন্তা করুন। উপজাতি কোটা, খেলোয়ার কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটা (বিশেষত জা.বি.তে -তাও ৫০-৫০!!!!!! ),বয়স ফ্যাক্ট (সব আদু ভাই-রা ভর্তির সুযোগ পান। আমি এমনও জানি, এক মেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও, শুধুমাত্র টিচারের মেয়ে এই যোগ্যতায় সে এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পেয়েছে....
আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ একবার বলেছিলেন, বিদেশের ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে গেলে মনে হয় এটা গোরস্তান, পিনপতন নীরবতায় সবাই যার যার পড়াশোনা করছে। আর আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটি কী রকম সেটা নাহয় না-ই বললাম।সবাই জানে।আমি দেশের প্রায় সব নামকরা ভার্সিটির হলে আর পাঠাগারে গেছি।কেউ গলাবাজি করতে আইসেন না। রাত এগারটার পর কেন হলের বাইরে থাকতে পারবে না, এর প্রতিবাদে আমাদের মেয়েরা মিছিল করে। জাহাঙ্গীরনগরে রাত এগারটা পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া বাইরে থাকা যায়।(!!!) তার পরে আসলে একটা নিয়ম রক্ষার সাইন করতে হয় হল গেটের খাতায়। (সম্ভবত রাত এগারটার পর তারা বাইরে গিয়ে গ্রুপ স্টাডি করতে চায়। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের এরকম অমানবিক সিদ্ধান্তের আমিও নিন্দা জানাই!! জাহাঙ্গীর নগরের আপুরূপী কু**গুলোর চালচলন আমাদের কালুরঘাটের টোকাই ছেলেগুলার থেকেও খারাপ। এরাই নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের র্যাগ দেয়। আমার যত ফ্রেন্ড জা.বি.তে পরীক্ষা দিতে গেছে প্রত্যেকেই র্যাগফোবিয়া নিয়ে পোস্ট দিয়ে গেছে। থাক সে কথা।
এবার আসি উচ্চশিক্ষায় গবেষণা প্রসংগে। বিদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোতে গবেষণা খাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়। আর আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলোতে এ খাতে কোন বরাদ্দ নেই। বলবেন, আমরা গরীব রাষ্ট্র? না জনাব। নব্বই কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সংগীত গাওয়া যায়, লাখ লাখ টাকা খরচ করে আলপনা (রোড পেইন্টিং) আঁকার মতো ফালতু কাজ করা যায়। সমাবর্তন নাম দিয়ে রুনা-লায়লাদের কোটি টাকা দিয়ে এনে গান করা যায়। একভাই পোস্ট দিয়েছিলেন,চবিতে রুনা লাইলাকে ১৪ লাখ দিয়ে আনা হয়। ১৪ টিও গান গায় নি।একটা গান শোনার দাম এক লক্ষ টাকারো বেশি।কোটি টাকা ব্যয়ে মমতাজদের এনে নাচানো যায়, কিন্তু উচ্চশিক্ষায় গবেষনা কাজে টাকা নেই। ইউনিভার্সিটিকে এগিয়ে নিতে হলে,দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইউনিভার্সিটির রিসার্চের বিকল্প নেই।
শিক্ষকদের অবস্থা দেখুন। ফাইভ পাশ করা কাউকে যদি প্রাইমারী স্কুলের টিচার বানানো হয় কিংবা এসএসসি পাশ করার পরদিনই যদি কাউকে হাইস্কুলের টিচার বানিয়ে দেওয়া হয়, অবস্থা কেমন হবে? বর্তমানে অনার্স শেষ করতেই অনেকে ইউনিভার্সিটির টিচার হয়ে পড়েন। না আছে কোন মৌলিক গবেষনাগ্রন্থ, বিশেষ প্রবন্ধ, না আছে প্রশিক্ষন! আর ব্যাক্তিত্বহীনতা তো আছেই। এরা স্টুডেন্টদের কী শিখাবেন? আর যারা অপেক্ষাকৃত ভালো তারা বিদেশ চলে যান। সিএনজি ড্রাইভারের মত বেতনে কে চাকরি করতে চায়?
বছরে কয়েকবার শিরোনামহীন, জেমস, আইয়ুব বাচ্চুকে এনে কনসার্ট করানো যায় (ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের অনুদান থাকে), কিন্তু বিদেশের বিখ্যাত কোন প্রফেসর/বিজ্ঞানী/ গবেষক এনে বক্তৃতা দেওয়ানো যায় না! স্টুডেন্টরা শিখবে কীভাবে? যেমন কর্তৃপক্ষ, তেমন স্টুডেন্ট!
সবচেয়ে বড় কথা হলো এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। শিক্ষামন্ত্রী কিংবা শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে চিন্তাই করেন না। দরিদ্র রাষ্ট্র হওয়ার পরও বুয়েন্স আয়ার্স কিংবা কায়েদে আজম ইউনিভার্সিটি পারলে আমরা পারবো না কেন?
এটা "ধর তক্তা, মার পেরেক" টাইপের কিছু না। প্রয়োজন ৫০/১০০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্লান। ভুলে গেলে চলবে না,একটা দেশের উন্নতি শুধু জাতীয় সংগীত গাওয়া, ক্রিকেট খেলা কিংবা সুন্দরবনকে ভোট দেওয়ার উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সে দেশের ইউনিভার্সিটির উপর।


Nov 23, 2016

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

মহাপ্রাণ বঙ্গবন্ধু

শেখ হাসিনার উচিত তার নিজের স্বার্থে দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনীমূলক সকল গন্থ প্রত্যাহার করে নেয়া...কারন যতবারই যতটুকু বঙ্গবন্ধুর জীবনী বা জীবনের অংশবিশেষ ঘটনা পড়ছি...শেখ হাসিনা'র প্রতি হতাশা দীর্ঘ হচ্ছে, এই লোকের মেয়ে হয়ে আপনি কেন উদার হতে পারছেনা?...আপনি কেন সেই রকম চোখে মানুষ দেখতে পারছেননা?

বঙ্গবন্ধু কোনো জীবনী গল্প যখন আমি পড়ি, অবাক হই। একটা মানুষ এতটা উদার হতে পারেন! এক সময় একটা গল্প পড়েছিলাম-

দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে চিলেকোঠার ছায়ায় বসে আছেন বঙ্গবন্ধু।

লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা। এক চেয়ারে বসে আরেক চেয়ারে পা তুলে দিয়েছেন। হাতে প্রিয় পাইপ। এরিন মোরের গন্ধে উতলা হয়েছে ছাদের হাওয়া।এ সময় একটি ছেলে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে ছাদে এলো। তার হাতে ক্যামেরা। সে ক্লিক ক্লিক করে বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলতে লাগল।

বঙ্গবন্ধু গম্ভীর মুখে ছেলেটির দিকে তাকালেন। ১৯৭৩ সালের কথা। বললেন, এই, তুই কে রে?
আমার নাম পাভেল, পাভেল রহমান।
কী করিস?
ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। ছবি তোলা আমার হবি।
তুই কি জানিস তুই কার ছবি তুলছিস?
জানি। বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলছি।
আমি যে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এটা তুই
জানিস?
জানি।
প্রেসিডেন্টের পারমিশন ছাড়া যে তাঁর ছবি তোলা যায় না, জানিস?
পাভেল চুপ করে রইল।
বঙ্গবন্ধু সিকিউরিটি ডাকলেন। 'এই ছেলেটাকে দাঁড় করিয়ে রাখ। আমি আসছি।'
সিকিউরিটির লোকজন পাভেলকে দাঁড় করিয়ে রাখল। বঙ্গবন্ধু নিচে নেমে গেলেন। ভয়ে পাভেলের তখন বুক শুকিয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু আবার ছাদে এলেন। তাঁর পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি আর বিখ্যাত মুজিব কোট। হাতে যথারীতি পাইপ। ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি পাভেলকে বললেন, 'এবার আমার ছবি তোল।'
পাভেলের ভয় কেটে গেল। গভীর উৎসাহে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি ছবি তুলল সে। একসময় বঙ্গবন্ধু একজন সিকিউরিটির লোককে দেখিয়ে বললেন, 'ওর হাতে ক্যামেরা দিয়ে তুই আমার পাশে এসে দাঁড়া।' পাভেল বঙ্গবন্ধুর পাশে এসে দাঁড়াল। বঙ্গবন্ধু তার কাঁধে হাত রাখলেন। সিকিউরিটির লোককে বললেন, 'ওর সঙ্গে আমার ছবি তুলে দাও।'

এই হল বঙ্গবন্ধু। এতটা মহান, এত উদার। অথচ কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এই মহান মানুষটিকে কতটা নির্মমভাবে হত্যা করল। আমি জানি না এই পাপ তারা কোথায় কিভাবে লুকিয়ে রেখে বেঁচেছিল। তবে জানি, এই দেশটাকে উদ্ধার করতে হলে আরেকজন বঙ্গবন্ধুর বড় দরকার। এই অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালি তা পাবে কই?

রবিবার, ১৮ জুন, ২০১৭

জগতের বিলাসবহুল ডিনারসেটে আমি একটা ভাঙা কাপ হয়ে জন্মেছিলাম



আমি বিশেষ দিন পালনে অভ্যস্ত নই। বাবাকে নিয়ে সারা বছরই আমি অনেক লিখি। শেয়ার করি অনলাইনে। সবাই পড়ে, আমার বাবাও। তবে এই বিশেষ দিনেও সবার মতো, আমার আব্বারে আমি এতো লাভ ইউ-থ্যাঙ্ক ইউ-সরি দিতে পারব না। আমার বাবা বহুত খারাপ ভাই, বহুত খারাপ

আমার আব্বা চোর ধরে। দুনিয়ার সবার কাছ থেকে লুকায়া আসি, হাহা-হিহি করে বাসায় ফিরি, আব্বা চোখের দিকে তাকায়। শক্ত করে ধইরা জিজ্ঞেস করে 'কি হইসে,মন খারাপ? সত্য বল। লুকাস ক্যান? তুই আমার সন্তান না আমি তোর?' ধরা খাই। বিরক্ত লাগে ভাই।

আমার আব্বা মোটেও ধৈর্যশীল,সহনশীল হ্যান ত্যান না। কিছু হইলেই বকা দেয়। বাবাকে দেখলেই আমার হাঁটু কাঁপে কখন কি জানি বলে বসে, "চুল এত বড় রাখছস ক্যান? কাল কই গেছিলি? এত রাত করে ফিরিস ক্যান?" হ্যান ত্যান ইত্যাদি ইত্যাদি।
আব্বা বুঝে না আমি বড় হইসি। বাড়ি ফিরতে একটু রাত হতেই পারে, এতো ফোন দেয়ার দরকার কি? কক্সবাজার যাব,বলে বেশি গভীর পানিতে নামবি না। বলেন, এইসব উপদেশ হাস্যকর না? কিন্তু যাওয়ার আগে পকেটে ছয় হাজার টাকা দিসে। আমি ভাব দেখায়া চাই নাই, তবুও।
আব্বা ব্যাকডেটেড। স্মার্টফোন চালায় না, বুঝেও না যে আমার ফোনে চার্জ তাড়াতাড়ি শেষ হয়। বন্ধ পেলেও ফোন দিতেই থাকে, দিতেই থাকে। অন করে দেখি ২১-২২ টা মিসকল। ব্যাক করলে দুনিয়ার গালি শোনায়। কেমনটা লাগে বলেন?

বাবা দিবসে আমার বাবার কিছু গল্প শোনাব। চাইলে পড়তে পারেন। ভালো লাগবে।

(১)
আমার বাবার মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছে। বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তার কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে একটা মোবাইল ব্যবহার আয়ত্ত করে এনেছেন। নতুনটায় পারবেন তো? তার চেয়ে বেশি চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। এই সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া নরমাল ফোন পাওয়া যাবে তো? অনেকদিন ওইসব ফোনের খোঁজখবর জানা নাই।

বাজারে ফোনের শোরুমগুলোতে ঢুকতেই সেলসম্যানরা আহলাদিত হয়, স্যার কোনটা দেখবেন? আমার চাওয়া শুনে হতাশ হয়ে বলে, ওদিকে দেখেন। পাশের সেলসম্যানকে ডেকে বলে, ওই স্যারেরে ওই ফোনগুলো দেখাও। যার কাছে পাঠায়, সেও বিরক্ত। চেহারা দেখে মনের কথা বোঝা যায়, এই যুগে এমন ক্ষ্যাত পোলাপান আছে? কোথাও আবার কেউ সহানুভূতিশীল, স্যার আর সামান্য কিছু টাকা হলেই কিন্তু আপনি একটা স্মার্টফোন নিতে পারতেন। আমি তার সহানুভূতিকে আরও উস্কে দেই। এমন একটা চেহারা করি, যার অর্থ দাঁড়ায়, নারে ভাই টাকা নাই।

অবশেষে একঝাঁক ক্ষেতের মাটি আর সহানূভূতি নিয়ে 'নোকিয়া' থেকে একটা নরমাল ফোন কিনে বাসায় ফিরি। তাদের আর বলা হয়না, টাকা কোনও বিষয় না ভাই। আমার বাবা প্রযুক্তির সাথে অতো বেশি পরিচিত না। বাসায় এসে মোবাইল চেঞ্জ করতে বাবা এসে পাশে দাঁড়ান। খুলে রাখা সিম হাতে নিয়ে বলেন, এইটা কী সিম বলে? আমি তো হাঁ হয়ে গেলাম!

বাবারা চাইলেই প্রযুক্তির সাথে মিলেয়ে চলতে পারেন তবে সব বাবারাই ইচ্ছে করে একটু সেকালে সেজে থাকেন, যেমনটা আমার বাবা। যদিও আমার বাবা অনেক স্মার্ট। সত্যি বলতে আমি আমার বাবার অযোগ্য পুত্র, বাবার তুলনায় আমার কোনো যোগ্যতাই নেই

(২)
বাবা আর আমি বন্ধুর মত। রাজনীতি থেকে শুরু করে পরিণীতি সব আলোচনা আমি বাবার সাথে করতাম। আমি ক্লাশ টেন পর্যন্ত বাবার সাথে ঘুমাইছি, একা একা ভয় লাগত বলে।

বাবার হাত ধরে তার আড্ডা দেওয়ার জায়গাটায় যেতাম প্রায় সময়। আমার কোনও কাজ নাই সেখানে। উল্টো একটা চেয়ারের অপচয়। আমি গিয়ে দখল করে থাকি। আমার সবচেয়ে আনন্দের মুহুর্ত সেখানে চা পান পর্ব। বাবা ও তার সমবয়সীরা আড্ডা দিতে দিতে চা পান করে। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে থাকি। সবাই সবার কাপের চা শেষ করলে্ও আমার বাবা করেননা। শেষের কিছু অংশ রেখে দেন। আমার জন্য।

পৃথিবীর কত ছোট জায়গায় যে কত বড় আনন্দ লুকিয়ে থাকে, সেই চা তার ভয়াবহ উদাহরন। আমি ধীরে ধীরে সেই অল্প চা পান করি। চা শেষ বলে চোখের ঘোষণার পরও আমি কাপ এপাশ ওপাশ বাঁকা করে চা বের করার চেষ্টা করি। সামান্য পাওয়া গেলে সেকি আনন্দ! কোন এক আড্ডায় আমার জন্য পুরো এককাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বাবা আমার বেড়ে ওঠাকে স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন। তারপর থেকে আমি আর ছোট হতে পারিনি। আর ইদানিং আমার সামনে মায়ের রেখে যাওয়া ফ্লাস্ক ভর্তি চা আমাকে সার্বোভৌম করে দিয়েছে।

চা আসক্ত হয়ে যা বুঝলাম, একজীবনে মা বাবার চায়ের ঋন শোধ করাই কঠিন। জগতের বিলাসবহুল ডিনারসেটে আমি আসলে ভাঙা কাপ হয়ে জন্মেছিলাম।

আমিরুল ইসলাম আল মামুন
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জ্ঞিনিয়ারিং
ব্রাক  বিশ্ববিদ্যালয়